সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে গত ১৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব ঢাকায় মহাসাবেশের ডাক দেন। তিনি বলেন, এটি তাদের মহাযাত্রার শুরু।
এরপর থেকেই দেশের রাজনীতিতে ২৮ অক্টোবর ঘিরে উত্তাপ ছাড়াতে শুরু করে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ছোট-বড় দল ও জোটগুলোও এদিন সমাবেশের ঘোষণা করে। বিএনপির সাবেক জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও একই দিনে ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি চায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে। আওয়ামী লীগ ২৮ অক্টোবরকে রহস্যময় করে তোলে নানা বক্তব্য ও হুমকি-হুঁশিয়ারির মাধ্যমে; যদিও বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো বলছিল, তারা কোনো ধরনের সহিংসতার পথে যাবে না। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবে, তবে এবারের কর্মসূচিগুলো আগের থেকে কঠোর হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, শাপলা চত্বরের মতো পরিণতি হবে বিএনপির। অন্য নেতারাও বলতে শুরু করেন, কোনো ধরনের কঠোর অবস্থানে গেলে প্রতিহত করা হবে। এটি তাদের পতনযাত্রা, বুড়িগঙ্গায় পর্যবসিত হবে তাদের এই মহাযাত্রা। এরমধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। ২৮ তারিখে বিএনপির প্রস্তুতি কেমন সেটি নিয়েও প্রতিদবেদন প্রকাশিত হয়।
সংবাদমাধ্যমের খবরে আসে, মহাসমাবেশ শেষে বিএনপি “ঘেরাও” কর্মসূচি শুরু করবে। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি এবং রাজপথ, রেলপথ, নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে পারে দলটি। এ জন্য ঢাকায় বড় জমায়েত করার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয় দলটি। বিএনপির প্রস্তুতি জানাতে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেসব সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে নতুন করে মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে; একইসঙ্গে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে সমাবেশের আগেই নানা পথে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঢাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। গত ২২ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রশাসনের বক্তব্য, সমাবেশ স্থল ও জামায়াতের অনুমতি
ঢাকায় একইদিনে মাঠের প্রধান বিরোধী শক্তিগুলো ও ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশ থাকায় পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানায়। পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে যে কারো রাজনৈতিক সমাবেশ করার অধিকার আছে তবে সহিংসতা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের জানমাল রক্ষার্থে তারা যে কোনো নাশকতা ঠেকাতে তৎপর। এরমধ্যে ঢাকার প্রবেশমুখে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, কাকে কোথায় অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, এসব বিষয় নিয়েও তারা কথা বলেন। তারা বলেন, জামায়াতকে কোনোভাবেই অনুমতি দেওয়া হবে না; এমনকি ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। অন্য দলগুলোকে শর্তসাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের কাছে তারা বিকল্প স্থানের নামও জানতে চেয়েছিল। অন্যদিকে বিএনপি ঘোষণা করেছিল, তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে।
সবশেষ ২৭ অক্টোবর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
তবে জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২৭ অক্টোবর ডিএমপি জানায়, জামায়াতকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। তার আগেই ২৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বলেন, অনুমতি না পেলেও তারা মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু ১৭
গত ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরবে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা হয়। রেলমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টা পর দুঃখ প্রকাশ করেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক জানায়, মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ট্রেন দুর্ঘটনার দিন ও পরদিন এসব বিষয় সংবাদমাধ্যমের আলোচনার শীর্ষে ছিল।
আনসারের আটকের ক্ষমতা ও পরে সংশোধনী প্রস্তাব
গত ২৩ অক্টোবর অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে অল্প সময়ের ব্যবধানে “আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩” নিয়ে খবর প্রচার হতে শুরু করে। আনসারকে আটক এবং দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দিয়ে এই বিলটি সংসদে ওঠে। বিলটির বিরোধিতা করেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, “পুলিশের সমান্তরাল ক্ষমতা আনসার বাহিনীকে দেওয়া হলে দুটি বাহিনীর অবস্থান মুখোমুখি হয়ে যেতে পারে।”
এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “সামনে নির্বাচন। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোতায়েন করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করতে হবে।” পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের দাবি নাকচ হয়ে যায়। বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
এ নিয়ে নানা স্তরে সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে বলে অভিমত দেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলারা। এছাড়া মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানায়। তারা বলেন, বিরোধী মত দমনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এটি নজিরবিহীন।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনের খসড়ায় আনসার ব্যাটালিয়নকে অপরাধী আটক ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে সংশোধনী আনার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিদেশ থেকে চিকিৎসক
গত ৯ অগাস্ট থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত আড়াই মাসে তাকে কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
গত ৯ অক্টোবর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সব অপশন শেষ হয়ে এসেছে।
তবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন করা হলেও সরকার তাতে সায় দেয়নি। পরে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৫ অক্টোবর রাতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় পৌঁছান চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন। যুক্তরাজ্য থেকে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রফিকুল আলম। পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচার করেছেন। অস্ত্রোপচারের পর খালেদা জিয়ার অবস্থা মোটামুটি। আগের থেকে ভালো আছেন।
অবৈধ বালু উত্তোলন ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ১৫ চিঠি
গত ২৫ অক্টোবর ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে নিয়ে “অবৈধ বালু উত্তোলন ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ১৫ চিঠি” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শীর্ষ আলোচনায় চলে আসে।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে মেঘনায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও অভিযোগ উঠেছে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির পৃষ্ঠপোষকতায় লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত চলছে এই বালু তোলার কাজ।
১৯৮০-এর দশকের রিকশাচালক থেকে সেলিম খানের উত্থানের পেছনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আন্তরিক কর্মী হওয়াকে বড় কারণ মনে করা হচ্ছে।
সেলিম খান এবং তার পরিবারের সদস্যরা যাতে তাদের বালুর ব্যবসা চালিয়ে যেতে এবং প্রসারিত করতে পারে সে জন্য ২০১৫ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দীপু মনি বিভিন্ন সরকারি অফিসে কমপক্ষে ১৫টি ডেমি অফিসিয়াল চিঠি লিখেছিলেন, যা ডিও লেটার নামে পরিচিত।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দীপু মনির সঙ্গে সেলিম খানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তখন থেকেই তিনি মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন।
ডেইলি স্টার তাদের অনুসন্ধানে দেখতে পায়, রাতের অন্ধকারে আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি ড্রেজারে বালু তোলা হচ্ছে। আর তা গোপন করতে ওই ড্রেজারের আশেপাশে কোন নৌকাকে ভিড়তে দেয়া হয় না।
বিভিন্ন নথিতে দেখা যায় যে শুধু ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২১টি মৌজায় বালু উত্তোলন করে প্রায় এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা আয় করেছেন সেলিম খান। অথচ সরকারি কোষাগারে তিনি একটি টাকাও দেননি।
পুলিশের উচ্চপর্যায়ে ৩৬৫টি নতুন পদ
গত ২৬ অক্টোবর বিবিসি বাংলা এবং ২৭ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে শুরু করে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পর্যন্ত ৩৬৫টি ‘সুপারনিউমারারি পদ’ (নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত পদ) সৃষ্টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া পদের মধ্যে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে ১০টি, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে ৬৫টি, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০টি এবং এসপির ১৫০টি পদ রয়েছে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে শিগগির পুলিশের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞের মতে, বিবিসি তার প্রতিবেদনে জানায়, নির্বাচনের আগে আগে প্রশাসন ও পুলিশকে খুশি রাখতেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। জনগণের অর্থেই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কাজ করছে বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক শারমিন মুরশিদ বিবিসিকে বলেন, ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়াটা এখন ঠিক হচ্ছে না। এটা নির্বাচনকে, নির্বাচনের প্রস্তুতিকে প্রভাবিত করবে এবং এক ধরনের নেতিবাচক বার্তা দেবে। এমন পদক্ষেপের কারণে জনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এক ধরনের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই আসলে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা?
মহাখালীতে খাজা টাওয়ারে আগুন, ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন
গত ২৬ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে মহাখালীর ১৪ তলা খাজা টাওয়ারের ১৩ তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ১৬ ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর কাজ করে। এ ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। বিঘ্নিত হওয়া ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে এক সপ্তাহ লাগার কথা জানায় বাংলাদেশ আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন- বিআইএসপিএ। তারা জানায়, খাজা টাওয়ারে দুটি ডেটা স্টোর ছিল। একটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে আর আরেকটির অবস্থা তারা বলতে পারছে না। এ জন্য সময় চাচ্ছিল তারা।
খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনায় বড় ক্ষতি হয়েছে ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট সেবায়। মোবাইল ইন্টারনেট ও ভয়েস কলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তা ব্রডব্যান্ডের তুলনায় কম। দেশে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। এরমধ্যে অন্তত ৫০ লাখ ব্যবহারকারী বিপাকে পড়েন।
অন্যদিকে দেশের প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সেবার বাইরে চলে যান। ভয়েস কলেও তারা ঝামেলায় পড়েন। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপনির্ভর যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিএনপির মহাসমাবেশের আগে এমন ইন্টারনেট বিপর্যয়কে সন্দেহের চোখে দেখেন অনেক ব্যবহারকারী।
বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী তিনদিনের বেলজিয়াম সফর শেষে দেশে ফেরেন ২৭ অক্টোবর দুপুরে। পরদিন সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ভেতর ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন।
২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রথম অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয় ৮,৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরের একনেক সভায় প্রায় ১,৯২৮ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০,৩৭৪ কোটি টাকায়। গত জানুয়ারি মাসে ৩১৫ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয়বার সংশোধন করা হয়। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০,৬৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ৪,৬১৯ কোটি টাকা। চীনা ঋণ ৬,০৭০ কোটি টাকা। টানেলের ভেতরে থাকা দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের প্রতিটি ২.৪৫ কিলোমিটার লম্বা। গাড়ি চলাচলের জন্য প্রতিটি টিউবে দুটি করে লেন রয়েছে। সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩৯ কিলোমিটার।
সমাবেশে হামলা
২৮ তারিখ ঢাকায় প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি দল ও জোট সমাবেশ করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল। নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসাবেশ, শাপলা চত্বরের পরিবর্তে আরামবাগে জামায়াতের এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরু হয় সকাল থেকেই।
২৮ অক্টোবর সকালে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে শাপলা চত্বরে পৌঁছাতে পারি না জামায়াত। তারা আরামবাগে অবস্থান নেয়। নির্বিঘ্নে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সমাবেশ করে তারা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশেও নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল ছাড়া তেমন কোনো বিপত্তি ছাড়াই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তবে বিপাকে পড়তে হয় বিএনপিকে। ইন্টারনেটবিহীন তাদের সমাবেশে বড় জমায়েত হয়। সকাল থেকে শুরু হওয়া বিএনপির জমায়েত মূল সমাবেশ স্থল থেকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তার নেয়।
বিডিনিউজ জানায়, সমাবেশ উপলক্ষে শান্তিনগর ও কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছিলেন বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতাকর্মী। সেসময় সড়ক দিয়ে পিকআপ ভ্যানে করে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা পিকআপ ঘিরে ফেললে লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে কিছুক্ষণ। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষের মধ্যেই কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বেলা সোয়া একটার দিকে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেই সংঘর্ষ বিজয়নগরেও ছড়িয়ে পড়ে। বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলো জানায়, একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে শুরু করে। কাঁদানে গ্যাসের কারণে সমাবেশস্থলে টিকে থাকা সম্ভব না হওয়ায় বিএনপি নেতারা মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পণ্ড হওয়ার আগে সারাদেশে রবিবার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
ঢাকা পোস্ট জানায়, মহাসমোবেশ পণ্ড হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা অলি-গলিতে আশ্রয় নেয়। এরপর শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। গলি থেকে বের হয়ে পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল ছোঁড়েন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পুলিশ পাল্টা ধাওয়া দিয়ে তাদের পিছু হটাতে শুরু করে।
বাংলা ট্রিবিউন জানায়, পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য নিহত ও ৪১ জন আহত হয়েছেন। ১৭ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এছাড়া অসংখ্য আহত ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন মেডিকেল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল, এক যুবদল নেতা ও একজন সাংবাদিক নেতার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ দাবি করছে, ছাত্রদলের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর যুবদল নেতার মৃত্যুর বিষয়ে বিএনপি বলছে, পুলিশি ও আওয়ামী লীগের হামলায় যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ছোঁড়া টিআর গ্যাসের ধোয়ায় আহত সাংবাদিক নেতার মৃত্যু হয়েছে।
হরতাল
বিএনপি ২৯ অক্টোবর হরতাল ডাকার পরপরই গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামীও হরতালের ডাক দেয়। অন্যদিকে হরতাল প্রতিহতে আওয়ামী লীগ সারাদেশে একইদিনে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয়। হরতাল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
২৯ অক্টোবর সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হরতাল কর্মসূচি নিয়ে বিডিনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার সকাল থেকে হরতাল শুরু হলেও আগের রাতে রাজধানী ও ঢাকার আশপাশের কয়েক জেলায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আটক ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরও বলা হয়, সকালে সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি শুরু হলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে তেমন একটা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। অপরদিকে এই হরতালের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ সারাদেশে মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করে। এতে কোথাও কোথাও দুই দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
এর মধ্যে লালমনিরহাটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আর বেশ কয়েক জায়গায় বিএনপির পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এর আগে মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাসের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।
অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা
গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, কর্মী হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ে আগামী ৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
Discussion about this post