গত ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রথম পাতায় নির্বাচন নিয়ে লিড আয়োজন করেছিল প্রথম আলো। আলোচিত হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও আয়োজনটি নিয়ে খুব বেশি কথা হয়নি। পরোক্ষভাবে প্রথম আলো একটি জরুরি প্রশ্ন তুলেছে। সেটি হলো, নির্বাচন কি হয়ে যাবে?
প্রথম আলো দুজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিমত ছবিসহ লিড নিউজের নিচেই ছেপেছে। তাদের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন আন্তর্জাতিক মহলের রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন, ভালো নির্বাচন হবে না।
আরেকজন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সম্ভবত নির্বাচন একতরফা হতে যাচ্ছে।
দুজনের বক্তব্যের সুর একই। সেটি হলো, নির্বাচন হয়ে যাবে এবং সেটি হবে একতরফা ও খারাপ।
প্রথম আলোর খবরটিতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন করার জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে কমিশন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নভেম্বরের শুরুতেই তারা তফসিল ঘোষণা করে ফেলবে।
খবরটির শুরুতে বলা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের কোনো মীমাংসা এখনো হয়নি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার অবস্থানে অটল রয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো। এমন পটভূমিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এখনো অনিশ্চিত। তবে নির্বাচন কমিশন নিজেদের ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোদমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একথা নতুন নয় যে, সরকার নিজেদের মতো করে বিএনপিকে ছাড়াই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে ফেলতে চায়। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও একই লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিরোধীদের দাবি সরকারের কাছে অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। ফলে, তারা মনে করে সাংবিধানিক উপায়ে নির্বাচন করে ফেলার জন্য যথেষ্ট আইনগত ভিত্তি তাদের আছে। নির্বাচন কমিশনও বিএনপি অংশ নেবে কি নেবে না এ বিষয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে চাইছে না বলেই মনে হয়। এরই মধ্যে পুলিশ, প্রশাসনে নানা রকমের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমলাতন্ত্রকে নির্বাচনের জন্য সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বিএসপির মতো দলগুলোকে মাঠে নামানো হয়েছে। এই দলগুলোর মাধ্যমে দলত্যাগী, পদবঞ্চিত ও উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগ্রহীদের নির্বাচনী নৌকায় ওঠানো যাবে বলে মনে করছে সরকার পক্ষ। আওয়ামী লীগের পুরনো জোটসঙ্গীরা নির্বাচনে আসবেই, জাতীয় পার্টিও যে বর্তমান ব্যবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে এটা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। শেষ সময়ে নির্বাচন নিশ্চিত জেনে আরো কিছু দল পক্ষ বদলাবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কিন্তু সমস্যা হলো, কাগজে-কলমে নির্বাচনকে যতই অংশগ্রহণমূলক দেখানোর চেষ্টা করা হোক, বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচনটি যে অংশগ্রহণমূলক হবে না সে কথা বাংলাদেশের মানুষ যেমন জানে তেমনি বাংলাদেশের বাইরের মানুষও জানে।
বাংলাদেশে আজ যে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে তার মূল কারণ তৈরি হয়েছে ২০১৪ সালে বিএনপিকে ছলে বলে কৌশলে, চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫৩ আসন নিশ্চিত করার আয়োজন থেকে। এবং ২০১৪ সালের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও সে নির্বাচনে রাতের ভোটের মাধ্যমে সরকার দলীয়দের জয় নিশ্চিত করার ঘটনা পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছে।
এরকম দুটি নির্বাচনের পর সকলেই মনে করে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আর আস্থা রাখার সুযোগ নেই। আর এমন নির্বাচন হলে তাতে বিএনপির অংশগ্রহণ করার সুযোগও নেই, কেননা এমন নির্বাচনে বিএনপির জেতার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য।
ফলে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছে। কোনো যুক্তিতে আন্দোলন থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ বিএনপির নেই। এরকম কিছু করলে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হলে (জয়ের সম্ভাবনা শূন্য) দলটির রাজনীতি সেখানেই শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তাদের নেতা-কর্মীরা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, চলমান আন্দোলন যদি সফলতা লাভ না করে, যদি তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি দাবি আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত চাপ তৈরি করতে না পারে তাহলে কী হবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি এক দফার আন্দোলনে যথেষ্ট সফল। তাদের কর্মসূচিতে সাধারণের সমর্থনও বিপুল। কিন্তু এই সমর্থন ও উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তারা সরকারের ওপর পর্যাপ্ত চাপ তৈরি করতে পারছে না। কৌশলে তারা পিছিয়ে আছে। এ অবস্থায়, আগের মতো আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে তারা কতটা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে এ নিয়ে সংশয় আছে। বিশেষ করে, শেষ সংসদ অধিবেশনের আগে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল আনতে বাধ্য করা যাবে না বলে অনেকে মনে করেন।
কিন্তু বিএনপি’র সামনে আন্দোলন জোরদার করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও তাদের নির্বাচনে যাওয়ার উপায় নেই। নির্বাচনের আগে ফল আনতে ব্যর্থ হলে নির্বাচনের পরেও তাদের আন্দোলনই চালিয়ে যেতে হবে।
এরকম একটি মরিয়া পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করেন, বিএনপি এবার সফল হতে পারে। তারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করে ফেলতে পারে।
কিন্তু তা যদি না ঘটে, তাহলে কি সরকার বিএনপিকে ছাড়াই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে একতরফা সাজানো নির্বাচন করে ফেলতে পারবে?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এবার এমনটি করা খুবই কঠিন। বিশেষ করে, ২০১৪ সালের অভিজ্ঞতার পর সাংবিধানিক দোহাইয়ের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। অন্য বাস্তবতাও আছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ছিল একা। শুধু তাই নয়, ভারতের মতো পরাশক্তি সরাসরি বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অবস্থান না নিলেও পরোক্ষে ভারতের কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিয়ে গিয়েছিল। সেবার জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো নির্বাচনের আগে-পরে ঢাকায় এসেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তারা ১৯৯৬ সালে বিএনপি যেমনটি করেছিল তেমনিভাবে একটি ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। অবশ্য এটা ঘটারও কোনো কারণ নেই। একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের জন্য ভারতের সে সময়কার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং সরাসরি ঢাকায় এসে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাকে নির্বাচনে আনতে রাজি করাবেন, এমনটি ভাবা যায় না। ফলে আওয়ামী লীগের মতো ভারতসহ অন্যরাও জানত যে, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হতে যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ পূর্ণ মেয়াদেই ক্ষমতায় থাকবে।
২০১৮ সালেও বিএনপি কার্যত একা ছিল। ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে তারা ডক্টর কামাল হোসেনসহ অনেককেই পক্ষে ভেড়াতে পারলেও, তারা পরাশক্তিগুলোর সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করতে পারেননি। অথবা পরাশক্তিগুলো বুঝতে পারেনি যে সরকার আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে ফেলবে।
এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট অনেকটাই আলাদা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সাল থেকে কার্যকরভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ সোচ্চার। ওই বছরের শেষে তারা র্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে। ২০২৩ সালে ভিসানীতি ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের সক্রিয়তা বলে দেয়, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট আন্তরিক।
গণতন্ত্রের পাশাপাশি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে কথাবার্তা বলে আসছে। আর এই প্রেক্ষাপটে যুক্ত হয়েছে ডক্টর ইউনুস প্রসঙ্গ। যুক্ত হয়েছে আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান প্রসঙ্গও। এসব বিষয়ে গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জাতিসংঘ অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাশ হয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ইইউ সরেজমিনে সমস্ত বিষয় পর্যবেক্ষণ করে জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না।
কেউ কেউ মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষে যাবে। পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি ছাড়াই সরকার নিজেদের মতো করে একতরফা নির্বাচন করে ফেলতে পারবে কোনো ওজর-আপত্তি ছাড়াই। কিন্তু সার্বিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপগুলো শুধু নির্বাচন-কেন্দ্রিক নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের সঙ্গে বেশ কিছু অর্থনৈতিক প্রসঙ্গও জড়িত। এরই মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সঙ্গে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে তারা খোলাখুলি কথা বলেছে। জিএসপি সুবিধা থাকা না থাকার প্রসঙ্গও আলোচিত হচ্ছে। এগুলো আমাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। ফলে ইইউ’র অবস্থান ও মতামত উপেক্ষা করে সরকার খুব সহজে একতরফা নির্বাচন করে ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না।
অনেকে মনে করেন, ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞাও নির্বাচনে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
যারা এমনটি মনে করেন, তারা হয়তো ভাবছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ হতে শুরু করবে নির্বাচনের পর। নাইজেরিয়া কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য দেশে যেমনটি হয়েছিল। এতে দেশগুলোতে নির্বাচন হয়ে গেছে, সরকার এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যেতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় নির্বাচনের আগেই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু হলো। আপাত অর্থে মনে হচ্ছে, এর প্রভাব হয়তো খুব বিস্তৃত ও গভীর হবে না। কিন্তু সত্য হলো, এই নিষেধাজ্ঞা নির্বাচনের আগেই সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র অস্থিরতা তৈরি করেছে। ওপরে তারা যাই বলুক না কেন, ভেতরে ভেতরে সকলেই জানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল ওয়েস্ট তৃতীয় বিশ্বের শাসক শ্রেণীর ড্রিম ডেস্টিনেশন। এ বাস্তবতা শুধু আজকের নয়। বহু দশক ধরে শাসক শ্রেণীর ওপরের অংশটি এসব দেশেই মধুচক্র তৈরি করেছে, শেষ বয়সে ভোগ করবে বলে। আগে তো বটেই, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী বসে বসে মনকলা খেয়েছে এমনটি ভাবার কোনো যুক্তি নেই। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী আমলাদের অনেকেই এর অংশীদার। ফলে তারা বাইরে যাই বলুক, ভেতরে এর প্রতিক্রিয়া ব্যাপক। এমনকি যারা এখনো বাইরে মধুচক্র করার কাজ শুরু করেনি তারাও চাইবে না তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন এভাবে একটি নির্বাচন করতে গিয়ে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাক।
তাহলে কি সরকার চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে দিয়ে একটি নির্বাচন করে ফেলতে পারবে না?
কেউ কেউ মনে করেন, সেটা সম্ভব। কিন্তু এর পরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা হয়তো সরকারের থাকবে না। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো এটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, মুখে যাই বলুক, বাংলাদেশের শাসকরা চীন-রাশিয়ার বলয়ে ঢুকে গেছে। এবং তারা নির্বাচন বাইপাস করে এই বলয়ের অন্য কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর শাসকদের মতো পাকাপাকিভাবে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটছে। এ কারণেই হয়তো পরপর দুটি নির্বাচনে কারচুপি করার পর তৃতীয় নির্বাচনে তাদের একই ধরনের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিগুলোর নেই। আরো একটি সত্য তাদের জানা যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে রেজিম পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এখানে একটি জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার এলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ইস্যু সহ বিভিন্ন আন্তঃআঞ্চলিক বিষয়ে সে সরকারের সঙ্গে ভিন্নভাবে কাজ করতে পারবে। ফলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের মতো ইতিবাচক মতাদর্শগুলো ব্যবহার করে যদি সমাধান করা যায়, তবে সেটি তারা করবে না কেন?
এই প্রেক্ষাপটে, সরকার চেষ্টা করলেও একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না। করলেও পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না।
অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের উচিত পরিস্থিতি উপলব্ধি করে নমনীয় পথ অবলম্বন করা। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করে ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এতে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পথ যেমন বন্ধ হবে, তেমনি আওয়ামী লীগ সরকার ও এর সহযোগীরা আরো বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাবে।
এখন পর্যন্ত সমঝোতার কোনো লক্ষণ সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিএনপিসহ বিরোধী দল চাপ প্রয়োগ করে সরকারকে কতটা না নমনীয় অবস্থায় আনতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।
ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপি যেভাবে মাঠে সক্রিয় হতে পেরেছে তেমন সক্রিয়তা ২০১৫ সালের পর দলটির মধ্যে দেখা যায়নি। ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর দলটির জন্য খুবই ভাল সুযোগ তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সেটা বিএনপির জন্য সীমাহীন দুঃখের কারণ হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা শক্তিগুলো যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। বল এখন বিএনপির কোর্টে।
Discussion about this post