পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলো চীন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে ঐকবদ্ধ হচ্ছে। ব্রিকস তাদেরই একটা পাটাতন। কিছু আপাত গণতন্ত্রের দেশ এতে যুক্ত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এই পরিস্থিতির বদল হতে থাকবে। ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্রিকসে সংযুক্তির ফলে সেখানে কর্তৃত্ববাদীদের পাল্লা ভারী হলো মাত্র। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এখন গণতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্বপরায়ণতার সংযোগস্থলে অবস্থান করছে। ভবিষ্যতে তারা কোনদিকে যাবে তার ওপর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অনেককিছু নির্ভর করবে।
এককেন্দ্রিক বিশ্বে নব্য উদারনৈতিক পুঁজিবাদের যে দাপট তার মোকাবিলা করা দরকার, সত্য। কিন্তু চীন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে সেটা সম্ভব হবে এমন মনে করার পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারণ এই দেশগুলোও মুলত পুঁজিবাদিই, বরং কর্তৃত্ববাদী পুঁজিবাদের ফলে এসব দেশের নাগরিকদের অবস্থা গণতান্ত্রিক বিশ্বের চেয়ে করুণ। পুঁজিবাদের বিপরীতে কোনো নতুন অর্থনৈতিক দর্শন চীন কিংবা রাশিয়া হাজির করতে পারেনি। একইভাবে পশ্চিমা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার বিপরীতে উন্নততর কোনো রাজনৈতিক দর্শনও তাদের ঝুলিতে নেই। ফলে শ্রমশোষণ ও সম্পদের কেন্দ্রীভবনের বাস্তব পরিস্থিতি কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক দেশের চেয়ে খারাপ।
সবদিক মিলিয়ে ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত না হতে পারাটা একটা ইতিবাচক বিষয়, বিশেষ করে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে আছেন তাদের জন্য। কারণ অদূর ভবিষ্যতে ব্রিকস হবে দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার যন্তরমন্তর ঘর, যেখানে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এক দরজা দিয়ে ঢুকবে আর চাইনিজ ঋণ হাতে নিয়ে আরেক দরজা দিয়ে বের হয়ে আসবে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের প্রচুর টাকা দরকার। বড় আকারের প্রশাসন, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের উচ্চবেতন ও অপ্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা, নানাবিধ খাতে অপচয় ও দুর্নীতির খরচ জোগাতে দেদারসে টাকা ছাপিয়েও কুলানো যাচ্ছে না। খবরে প্রকাশ, রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকারী বলে মানছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বেকার যুবকদের সরকারী চাকুরীর আবেদন করতে হলে এখন থেকে ভ্যাট দিতে হবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এদিকে মেগাপ্রকল্পের ঋণ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশকে আগামী বছরগুলোতে বিশাল অংকের নতুন ঋণ পেতে হবে। এই ঋণ দিতে পারে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ অথবা চীন। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে ব্রিকসে যোগদানে ব্যর্থ হবার ফলে চীন থেকে ঋণ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তাতে করে দেউলিয়া হওয়া এড়াতে বাংলাদেশকে বাধ্য হয়ে পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন মেনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর কাছেই হাত পাততে হবে বলে মনে হয়। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, দুর্নীতির রাশ টেনে ধরে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার আর তেমন কোনো সুযোগ বাংলাদেশের হাতে আপাতত থাকছে না। কারণ টাকার কাজ তো আর গলার জোর আর হম্বিতম্বি দিয়ে হয় না।
Discussion about this post