বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদনের শুনানি আবার পিছিয়েছে। সোমবার (২০ নভেম্বর) তার জামিনের জন্য শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। তবে এদিন শুনানি হয়নি। মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানির জন্য ২২ নভেম্বর নতুন দিন ঠিক করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল বিন আতিক।
জানা গেছে, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় জামিন শুনানি পেছানোর আবেদন করা হয়। তখন ফখরুল ইসলামের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন শুনানির নতুন দিন ঠিক করেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলায় কারাগারে রয়েছেন মির্জা ফখরুল। গত ২৯ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। আদালত সেদিন তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষ শুরু হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা দিয়ে। ওই হামলা কারা করেছিল তা জানা যায়নি এখনো। পুলিশও চার্জশিট জমা দিয়েছে এমন খবর নেই। তবে এ হামলার মামলায় পরদিন মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহার ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরওয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরীন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছে বিএনপি। ২৯ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২২টি কর্মদিবসের মধ্যে ১৯ দিনই হরতাল বা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।
এর মধ্যে আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেই সূচি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর।
সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপিকে কার্যত নির্বাচনী কার্যক্রমের বাইরে রেখে সরকার একতরফাভাবে আবার নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। যা নিয়ে দেশে ও বিদেশে সংশ্লিষ্ট মহল উদ্বেগ জানিয়েছে। ইতিমধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
এ অবস্থায় সরকার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। তবে সেটা তাদের মুখের কথা বলেই মনে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের সব নেতাকে করাগারে রেখে বা মামলার জালে বন্দী করে সরকার একতরফা নির্বাচনের যে আয়োজন করছে তা ব্যুমেরাং হতে পারে তাদের জন্যও। এ অবস্থায় এভাবে নির্বাচন করলে বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যাবে না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও বলেছেন, এমন নির্বাচন স্যাংশনের ঝুঁকিতে ফেলবে বাংলাদেশকে।
ইতিমধ্যে পোশাক খাতেও কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি করা হয়েছে। এতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন শ্রমিকদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার একটি ঘোষণায় তারা সাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে, পোশাক খাতও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
দেশকে আর কোনো অনিশ্চয়তা, সংঘাত বা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ফেলতে না চাইলে এ মুহূর্তে জরুরি হলো বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেওয়া। তাকে মুক্তি দিয়ে বিএনপিকে আবার সচল করা সরকারি দলের জন্যই জরুরি। মির্জা ফখরুলকে মুক্তির মধ্য দিয়ে সরকার সংলাপের পরিবেশ তৈরির কাজ শুরু করতে পারে। যেহেতু তফসিল ঘোষণা হয়েই গেছে, ফলে সরকার নির্বাচন করার দিকে একধাপ এগিয়ে আছে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সেই নির্বাচনী আয়োজনে যুক্ত করা যায় কি না, সেই চেষ্টা এখন সরকার করে দেখতে পারে। এর ফলে অন্তত বাংলাদেশের রাজনীতিতে দম ফেলার কিছু জায়গা তৈরি হবে। হরতাল-অবরোধ থেকেও বিএনপি এবং বিরোধীদের সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
যদিও জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তবে বিভিন্ন সময়ে আমরা আদালতকে দেখেছি জনস্বার্থে ভূমিকা রাখতে। সে হিসেবে বাংলাদেশে যে সংকট চলছে তা বিবেচনায় রেখে মির্জা ফখরুলকে জামিন দেওয়া যায়। তা ছাড়া মির্জা ফখরুল একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। তিনি অসুস্থ বলেও জানাচ্ছেন তার আইনজীবীরা। তার বিরুদ্ধে প্রায় এক শ মামলা রয়েছে। তিনি এসব মামলায় আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেন বলে আমরা জানি। সার্বিক বিবেচনায় আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল বলেই আমরা দেখেছি। তা ছাড়া এ মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে বলে কোথাও শোনা যায়নি। কারা বিচারপতি বাসভবনে হামলা করেছে তাও জানা যায়নি। কেউ পুলিশি জেরার সময় মির্জা ফখরুলের নাম বলেছেন এমন তথ্যও নেই। এসব বিবেচনায় অন্যান্য মামলা বিবেচনায় মির্জা ফখরুল জামিন পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করছি।
Discussion about this post