শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদ হার বা রেপো রেট বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুফল পাওয়ার পর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক- বাংলাদেশ ব্যাংকও চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে মুদ্রাবাজারে অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছিল।
গত ৪ অক্টোবর নীতি সুদহার বা রেপো রেট এক ধাক্কায় দশমিক ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে রেপো রেট ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
নীতি সুদহার বাড়ানোয় দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি সুদে অর্থ ধার করতে হচ্ছে।
অর্থের সরবরাহ হ্রাসের উদ্দেশ্য থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এরই মধ্যে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। সুদহার বেশি হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগের চেয়ে বেশি অর্থ ধার করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৪ অক্টোবর নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দৈনিক ধারের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ১০ হাজার কোটি। কিন্তু এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকগুলোর নেওয়া ধারের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে। ২৫ অক্টোবর দেশের ইতিহাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধার নেয় ব্যাংকগুলো। ওই দিন ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। এরপর ২৬ অক্টোবর ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ১৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২৯ অক্টোবর ধারের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এবং ৩০ অক্টোবর ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল।
অপর দিকে ব্যাংক আমানতের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্য। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খরচ মেটানোর পর মানুষের হাতে বলতে গেলে ব্যাংকে রাখার মতো টাকাই থাকছে না। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমানতের টাকা ভেঙে খাচ্ছেন অনেকে। সঞ্চয়ের মুনাফা যেখানে ৬ থেকে ৭ শতাংশ, সেখানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। অর্থনীতির সাধারণ জ্ঞানই বলে, দীর্ঘ সময় এ অবস্থা চললে সঞ্চয় তুলে নেবে মানুষ। হয়েছেও তাই, ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সঞ্চয় ভাঙিয়ে খাচ্ছে মানুষ। গত এক বছরে ব্যাংক খাতের বাইরে মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ সাধারণ আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও ব্যাংকে নতুন করে তেমন একটা জমা করছেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। ফলে ব্যাংক থেকে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করছে।
এই মুহূর্তে দেশের মুদ্রাবাজার অনেকটাই খ্যাপাটে আচরণ করছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ। তাদের মতে, নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের যে উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে ব্যাংক খাতে তারল্যের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেটি অপ্রত্যাশিত নয়। তবে এটি ব্যাংকগুলোর জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনছে না। কারণ আমানতের সুদহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এখন ৯-১০ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহে মরিয়া। তহবিল সংগ্রহ ব্যয় বাড়লেও তারা ঋণের সুদহার বাড়াতে পারছে না। গ্রাহকরা ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় খেলাপি ঋণও বাড়ছে। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা আরো দুর্বল হচ্ছে।
সুদহার বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মানুষের চাহিদা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এর ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে যাচ্ছে, ফলে পণ্যের দাম আরো বাড়ছে। তারল্য সংকটের কারণে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে আমানত না রেখে বিল-বন্ড কিনছে। ব্যাংকগুলোও উদ্যোক্তাদের ঋণ না দিয়ে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি উৎসাহ বোধ করছে।
বলা হচ্ছে যে, এই মুহূর্তে তারল্য সংকট এতো তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, অনেক বেসরকারি ব্যাংক এখন ১২-১৩ শতাংশ সুদেও মেয়াদী আমানত সংগ্রহের ঘোষণা দিচ্ছে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত আমানত না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। যা গত ২৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ দেখে বোঝা যায়। এক্ষেত্রে সুদহার ছিল ৭ দশমিক ২৫ থেকে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। আবার কলমানি বাজার থেকে ১০ শতাংশ সুদ দিয়েও অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, চলতি বছরের আগস্টে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ কমে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও মেয়াদী আমানত (টাইম ডিপোজিট) ও চাহিদা আমানত (ডিমান্ড ডিপোজিট) লক্ষণীয়ভাবে কমছে। মেয়াদী আমানতের অর্থ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। অন্যদিকে চাহিদা আমানতের অর্থ কোনো নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জমা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই, চাহিদা আমানত থেকে যেকোনো সময় টাকা উত্তোলন করা যায়। চলতি বছরের জুলাই মাসে মোট চাহিদা আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে আগস্ট শেষে চাহিদা আমানতের পরিমাণ কমে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ব্যাংকাররা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা ভেবে মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা না রেখে হাতে নগদ অর্থ রাখতে চাইছে। যার ফলে সংকট মোকাবিলায় নগদ অর্থ সংকটে পড়া ব্যাংক গুলোই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে। আবার ব্যাংকিং সেক্টর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমানত বৃদ্ধির ধীরগতি, ঋণ পুনরুদ্ধারের দুর্বলতা ও আমদানি বিল পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কেনার মতো একাধিক কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণও বেড়েছে, যা একটি ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমায়।
সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও ঋণ নিচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এ দুই উপায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে তারল্য বের হয়ে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের হাতে সঞ্চয় থাকছে না। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি খুবই কম। অনেক ব্যাংকের আমানত না বেড়ে উল্টো কমে যাচ্ছে। এ বছরের জুলাইয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার দেখা গেছে ৮ শতাংশ, অথচ ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশের বেশি। তাছাড়া ঋণের সুদহার না বাড়ানোর কারণে অনেকেই সহজে ঋণ নিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেকর্ড ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। নতুন টাকা ছাপিয়ে এ ঋণের যোগান দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে মূলত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে। এর ধারাবাহিকতায় ট্রেজারি বিলের ইল্ড রেট ও বন্ডের সুদহার—দুই-ই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, গত তিন মাস যাবত টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়ার কাজটি আপাতত বন্ধ আছে। অন্যদিকে অর্থের চাহিদা তীব্র হলেও দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের (কলমানি) লেনদেন ৫-৬ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মূলত বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতেই তারল্য না থাকায় কলমানি বাজারের লেনদেন বাড়ছে না। এ কারণে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক কলমানি রেটও সম্প্রতি অনেক বেড়েছে।
২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এলেও সেটির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগস্টে মূল্যস্ফীতির এ হার ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। যদিও এক বছর আগে দেউলিয়াত্বের মুখে পড়া শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি এখন ২ শতাংশেরও নিচে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মূল্যস্ফীতিও ৫ শতাংশের ঘরে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের মধ্যেই চলতি মাসে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রতি কেজি আলুর দাম ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। আর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম উঠে গিয়েছে ১৩০ টাকায়। চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া পরিবহন, পোশাক-আশাক, শিক্ষাসামগ্রীর মতো খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার দামও বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ বিপরীতমুখী প্রভাব ফেলছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫ শতাংশ, যা গত ১২ বছরে সর্বোচ্চ। পরের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে তা কিছুটা কমে ৯.১ শতাংশ হয়েছে। ওই দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছড়িয়ে গেছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পেট্রল, অকটেন, ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম সাড়ে ৪২ থেকে ৫১.৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ২০ বছরে একসঙ্গে এত বেশি পরিমাণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর রেকর্ড আর নেই। তাই আগস্টের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। যা এখনো অব্যাহত আছে। এই সবের প্রভাব ব্যাংকিং খাতের আমানতের ওপর পড়েছে। এবং এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আমানতকারীরা ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নিচ্ছেন এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামলাতে অনেকে নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছেন না।
তবে ট্র্যাডিশনাল মুদ্রানীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় সুদহারসহ অর্থনীতির সব কাঠামোই বাজারভিত্তিক। কিন্তু আমাদের দেশে সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত। তার সাথে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি প্রায় শতভাগ ব্যাংকনির্ভর। আমাদের অর্থনীতির এখনো ৬০ ভাগেরও বেশি ব্যাংকের আওতার বাইরে।
অর্থনীতির অন্য সব উপাদানের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে কেবল সুদহার বাড়ানোর পদক্ষেপ এ দেশে কার্যকর হবে না। এ যেন হাত পা বেঁধে কাউকে সাঁতার কাটতে দেওয়ার সামিল।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, শ্রীলঙ্কা কিভাবে পারলো? শ্রীলঙ্কা সফল হতে পেরেছে কারণ শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় বাংকের এই সব ব্যাপারে একক সিদ্বান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে। যা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই।
বাজারে অর্থের প্রবাহ কমানোর যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, তাতে এসএমই, কৃষিসহ উৎপাদনশীন খাতই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা বের করে নিচ্ছে তাদের ওপর মুদ্রানীতির কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং বাজারে পণ্যের সরবরাহ লাইন যাতে ভেঙে না পড়ে সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। উৎপাদনশীল খাতগুলোয় অর্থপ্রবাহ নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে প্রণোদনা দিতে হবে। অন্যথায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তা মূল্যস্ফীতি আরো উসকে দেবে। এদিকে সঞ্চয়ের অর্থও খেয়ে ফেলছে মুদ্রাস্ফীতি। তবে স্বল্প সময়ে ও সহজে এই সংকট কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
Discussion about this post