বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার আবেদন আবার ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে জেলে ফিরে গিয়ে আদালতে আবেদন জানাতে হবে। গত বুধবার অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবেন খালেদা জিয়া।
সরকার পক্ষ থেকে দেওয়া এসব যুক্তিকে রাজনৈতিক বলছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে আইনজীবী কায়সার কামালও বলছেন, সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিতে চায় না। অপরদিকে আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন খালদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দেওয়ার সুযোগ সরকারের হাতে রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সর্বশেষ কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। খালেদা জিয়া এখন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিতে চায় তার পরিবার।
এ জন্য কয়েকবার আবেদন করলেও অনুমতি মেলেনি। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই আবেদন যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর খবর পাওয়া যায়, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার আবার আবেদন জমা দিয়েছেন সরকারের কাছে। অনেকে তখন ভেবেছিলেন, খালেদা জিয়াকে এবার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেবে সরকার। তাকে জার্মানি নেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও খবর ছড়িয়ে পড়ে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথাও বলেন।
তবে সরকার আগের মতোই জানায়, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দেওয়ার সুযোগ সরকারের হাতে নেই। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, নিষ্পত্তি হওয়া রিট আবেদনটি শুনানির কোনো সুযোগ নেই। আমরা মতামত দিয়েছি যে ৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি করা পিটিশনটি একটি মীমাংসিত বিষয় (পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন)। এটি চালুর আর কোনো সুযোগ নেই।’
যদিও ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলা বার্তা সংস্থা ইউএনবি-র বরাত দিয়ে ৩ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানায়, সরকার যখন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ অষ্টমবারের মতো বাড়িয়েছে, তখন মীমাংসিত বিষয় (পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন) হিসেবে আবেদনের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইভাবে শর্ত প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতিও দেয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ধারা ৪০১(১) অনুসারে খালেদা জিয়াকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দিয়ে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারে। সিআরপিসি ধারা ৪০১ (১) -এর ব্যাখ্যা দিয়ে তারা বলেছেন, সরকার যেকোনো সময় শর্ত ছাড়াই খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত বা মওকুফ করতে পারে।
বিশিষ্ট আইনবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সরকার শর্ত সাপেক্ষে বা শর্ত ছাড়াই যে কোনো বন্দীর সাজা স্থগিত করতে পারে বা শাস্তির সম্পূর্ণ বা কোনো অংশ মওকুফ করতে পারে। সিআরপিসি-র ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী সরকার দুটি শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে।’
শাহদীন মালিক বলেন, ‘প্রথম শর্তটি ছিলো তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস এবং দ্বিতীয় শর্ত ছিল তাকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে হবে। প্রথম শর্ত পরিবর্তন করে, সরকার কয়েকবার তার কারাদণ্ড-এর স্থগিতাদেশ বাড়িয়েছে। কিন্তু এই শর্ত পরিবর্তনের জন্য খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে যেতে হয়নি। এর মানে হলো, সরকার তার বিবেচনার ক্ষমতা দিয়ে এটি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘একইভাবে, দ্বিতীয় শর্ত হলো তাকে অবশ্যই ঢাকায় চিকিৎসা নিতে হবে। সরকার এটি পরিবর্তন করে বলতে পারে যে তিনি যেকোনো ‘উপযুক্ত’ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। সরকার যদি তা করে, তাহলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না।’
শাহদীন মালিক আরো বলেন, ‘আমি আইনমন্ত্রীর সিআরপিসি ধারা ৪০১(১) -এর ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নই। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়াকে কেন আবার কারাগারে যেতে হবে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে এবং এটি আরো কিছু শর্ত যোগ করতে পারে; যেমন তিনি বিদেশে রাজনীতি করতে পারবেন না এবং তাকে অবশ্যই চিকিৎসার পর দেশে ফিরে আসতে হবে।’
শাহদীন মালিক উল্লেখ করেন,‘আমি মনে করি না যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন আছে; সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করেই এটি করতে পারে।’
বুধবার সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেলেছেন। পুনরায় এ ক্ষমতা প্রয়োগের আর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে তারা ক্ষমা চাইতে যাবে কি না সে পরামর্শ আমি দিতে চাই না। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।’
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হলে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে আবেদন করতে হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। খালেদা জিয়া চাইলে ক্ষমা চেয়ে সাজা মওকুফ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন।
আ স ম আবদুর রব ও হাজি সেলিম দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার, এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আবদুর রবকে মুক্তি দেওয়া হয় সামরিক শাসন চলাকালে। তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ক্ষমতাবলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আর হাজি সেলিমের দণ্ডাদেশ বহাল থাকার পর তিনি আপিল করেন। আপিল করার পর হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে। তিনি ওই সময়ের আগেই দেশে চলে আসেন।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আইনে কোথাও বলা নেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার। তাকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা আছে, বিদেশে যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক নয়; এটি আইনি বিষয়।
আইনমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তার বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো শর্ত ছিল না। তাকে অনুমতি নিতে হয়নি।
সেনা নিয়ন্ত্রিত এক-এগারোর শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসা নেওয়া বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গত মঙ্গলবার গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘দেখা যাবে শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ ব্যবহার করেছেন ২০০৮ সালে। জরুরি আইনের সরকারের সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। একাধিক মামলায় সুপ্রিমকোর্টেও শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছিলেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে তখন বলা হয়েছিল মামলাগুলোর বিচারে কোন বাধা নেই। এরমধ্যে ছিল মিগ-২৯ ক্রয়ে দুর্নীতির মামলা এবং ফ্রিগেট ক্রয়ে দুর্নীতির মামলা। এছাড়া বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মামলাগুলোতে চার্জশিট দিয়ে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। বিচারে সাক্ষীও শুরু হয়েছিল একাধিক মামলায়। এই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অসুস্থাতার কথা বলেই বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল জরুরি আইনের সরকার। যদিও সাবজেল থেকে নির্বাহী আদেশে মুক্ত হওয়ার দুই/তিন দিনের মধ্যেই তিনি বিদেশে যান চিকিৎসার জন্য। নির্বাহী আদেশে তাঁর মুক্তির পরও একটি চাঁদাবাজির মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছিল। এই মামলাটিতে জামিনের আবেদন হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগেও খারিজ করা হয়েছিল। তিনি নির্বাচনের আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন একজন ওয়ারেন্টের আসামী হিসাবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথও নিয়েছিলেন ওয়ারেন্টের আসামী থাকা অবস্থায়।” (সূত্র বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ)
অপরদিকে জাসদ নেতা আসম আবদুর রবের চিকিৎসা বিষয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে আ স ম রব বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে তিনি বিদেশ যান। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি। রব জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য সরকারি অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছিলেন। পরে তিনি সুস্থ হলেও দেশে ফিরতে দেরি করেন।
আর হাজি সেলিমের বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি ছিল গোপন। তিনি দণ্ডিত ছিলেন এবং আদালত তাকে আত্মসমর্পণের জন্য এক মাস সময় দিয়েছিল। এই এক মাস সময়ের ব্যবধানে তিনি বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরেন। তবে তিনি যে ফিরবেন এ বিষয়ে নিশ্চয়তা ছিল। কারণ তার পরিবারের এক সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘তিনি দেশ ছেড়ে বেশি দিন দূরে থাকার মতো মানুষ নন। তার অনেক ব্যবসা, বাণিজ্যের খোঁজ রাখতে হয়। কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তিনি করেছেন। তিনি দেশে না থাকলে সবার জন্যই সমস্যা।’
তার চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়া এবং খালেদা জিয়ার জন্য অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান লিখেছিলেন, ‘বিএনপির নেতারা যতবার চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন, ততবার আওয়ামী লীগের নেতারা, মন্ত্রীরা বলেছেন, দণ্ডিত আসামির দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে হাজি সেলিমের জন্য সেই সুযোগ কীভাবে হলো? হাজি সেলিমের আইনজীবীর ভাষ্যমতে, তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণেই বিদেশে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ যে সুবিধা পেতে পারেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী সেই সুবিধা পেতে পারেন না? এখানে খালেদার জন্য এক আইন আর হাজি সেলিমের জন্য অন্য আইন দেখা যাচ্ছে। যদিও নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে রেখেছে।’
তিনি আরো লেখেন, ‘১৪ বছর আগে বিচারিক আদালতে হাজি সেলিম দণ্ডিত হলেও এখন পর্যন্ত জেল খাটতে হয়নি। আর খালেদা জিয়ার মামলার রায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সাংসদ হাজি সেলিম, দুজনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির মামলা হলেও এর গুণগত পার্থক্য আছে। খালেদা জিয়ার মামলা দুটি হলো জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল তহবিলের অর্থ হস্তান্তর-সংক্রান্ত। সেখানে অর্থ আত্মসাতের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু হাজি সেলিমের মামলাটি হলো অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে। নিম্ন আদালত তাকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দিলেও উচ্চ আদালত কমিয়ে ১০ বছর করেছেন। অন্যদিকে খালেদার মামলায় নিম্ন আদালতের দণ্ড উচ্চ আদালতে বেড়ে গেছে।’
এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়টিও আছে আলোচনায়। দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি প্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
এতে বলা হয়, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
রাজনৈতিক মহলে বলাবলি আছে যে, এখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে বিএনপি দেখাতে পারবে যে এটা তাদের আন্দোলনের অর্জন। নির্বাচনের আগে যা সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠবে। তা ছাড়া খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়বে। যা আওয়ামী লীগের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ে একটি প্রশ্ন করে সরকার এবং তার সমর্থকরা বিএনপিকে অস্বস্তিতে ফলে দিয়েছিল। সেটি হলো, তারা ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? খালেদা জিয়া জেলে এবং দণ্ডিত অবস্থায় তারেক রহমান বিদেশে থাকলে সরকার আবার এ সুবিধাটা নিতে পারবে। বিএনপির নেতা কে? এ প্রশ্ন হারিয়ে যাবে যদি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে পাঠানো হয়। তার চেয়ে বরং সরকার বিএনপির প্রধান দুই ব্যক্তিকে নেতাকর্মীদের থেকে দূরে রেখে যে সুবিধা পেয়ে আসছিল, সামনের নির্বাচন পর্যন্ত তা চালিয়ে নিয়ে যেতে চায়। সরকারের মনে এমনটাও থাকতে পারে যে, যদি জানুয়ারিতে তারা আবার ক্ষমতায় চলে আসে, তখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
Discussion about this post