কয়েক সপ্তাহ জুড়ে ঢাকায় অনেকেই একে অপরকে প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে বিএনপিকে বাদ রেখে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা ঠেকিয়ে বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?
যদি তা পারে, তবে সেই সরকারের নেতৃত্ব কে দেবেন?
এমন কি হতে পারে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস আসবেন?
কেউ কেউ বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়ে বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে চাইতেন তবে ২০০৭ সালেই হতে পারতেন। সরকার প্রধান হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে সেনাবাহিনী প্রথম তার কাছেই গিয়েছিল। তখন তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। সে ঘটনার ১৬ বছর পর তিনি কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে চাইবেন?
ডক্টর ইউনূসের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৮ জুন। সে হিসেবে তার বয়স ৮৩ বছর। ৮৩ বছর বয়সে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের নজির বিশ্বে নেই এমন নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৮০ বছর। ডক্টর ইউনূস স্বাস্থ্যগতভাবে বেশ ভালো আছেন বলে মনে হয়। তার চিন্তা-ভাবনাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে। কিন্তু তিনি আগের অবস্থানেই অটুট আছেন বলে মনে হয়। স্বল্পমেয়াদী একটি সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে দুর্নাম কামানোর চেয়ে এই বয়সে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ হিসেবে নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বক্তৃতা দিয়ে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলে তিনি দিব্যি ভালো একটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। দেশ পরিচালনার অনর্থক ঝামেলা তিনি কেন নিতে যাবেন?
বিপরীত পক্ষে যারা যুক্তি দিচ্ছেন তারা বলছেন, তিনি যদি তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব না-ই নেবেন তবে ক্ষমতাসীনরা তার ওপর হঠাৎ করে ক্ষেপে গেল কেন? কেন এতদিন পর এসে তার বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা করানো হলো? দেওয়ানী মামলা ফৌজদারী আদালতে নিয়ে যাওয়া হলো? কেনই বা তাড়াহুড়া করে বিচার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে? আর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নিয়মিতভাবে তার বিরুদ্ধেই কেন এত বিষোদগার শুরু করলেন? তিনি যদি সরকারের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়াবেনই তবে সরকার তাকে এত সিরিয়াসলি নিচ্ছে কেন? তাকে আলাদা রেখে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করার নীতি নিলেই কি সরকার ভালো করতো না?
সরকার তো জানতোই, ড. ইউনূসকে নাজেহাল করতে গেলে তার নোবেল বিজয়ী বন্ধুরা, বিশ্ব নেতারা, বৈশ্বিক সিভিল সোসাইটির সদস্যরা কথা বলবেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ চুপ থাকতে পারবে না। তাহলে ভোট সামনে রেখে একটা নাজুক পরিস্থিতিতে ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব পদক্ষেপের কারণ কী?
যারা মনে করছেন, ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপের কারণ শুধু ঈর্ষা বা তাকে সাইজ করে রাখা তারা সে যুক্তি দিচ্ছেন।
কিন্তু সবাই একটা বিষয়ে একমত, এবার ডক্টর ইউনূস প্রসঙ্গ মাঠে আনতে সরকারই প্রোএকটিভ ভূমিকা পালন করেছে। কেননা রাজনীতি নিয়ে প্রফেসর ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে চুপ ছিলেন, এমনকি মামলার পরেও তিনি রাজনীতি বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। যদিও তার পক্ষে চিঠি লিখতে গিয়ে তার বন্ধুরা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমত দলন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের তরফেও ড. ইউনূসের প্রসঙ্গে এসব কথা উঠেছে। কিন্তু ডক্টর ইউনূসের পক্ষ থেকে রাজনীতি বিষয়ে কোনো কথা এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।
এসব আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে গতকাল দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গত নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে নিজেদের অশুভ তাণ্ডব চালিয়েছে। এবারও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূসকে ইস্যু করে মাঠে নামতে চায়। সেই খেলা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইউনূসকে নিয়ে আবার এক-এগারোর অস্বাভাবিক সরকারের খেলায় মেতে উঠতে চায়।’ (প্রথম আলো, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩)
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর ডক্টর ইউনূস বিষয়ে সরকার কী ভাবছে সে বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। তারা মনে করছেন, এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে সে সরকারের প্রধান ড. ইউনূস হতে পারেন। কেন তারা এ কথা মনে করছেন তা স্পষ্ট না হলেও তাদের পদক্ষেপ দেখে বোঝা যাচ্ছে আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে তারা ড. ইউনূসের পথ রুদ্ধ করতে চায়। হয়তো আগ বাড়িয়ে সরকার এ কারণেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যদিও এ বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসের দিক থেকে কোনো আগ্রহের বা উৎসাহের নজির এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কথা বেশ কৌতুহলউদ্দীপক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে বিএনপি কী ধরনের অশুভ তাণ্ডব চালিয়েছে তা তার বক্তব্য থেকে বোঝা গেল না। বরং সেসময় মামলা-হামলা, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সরকারই নানা ধরনের তাণ্ডব চালিয়েছে এটা অনেকেই মনে করেন। শুধু তাই নয়, ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল তার অনেক নেতাকেই সরকার টোপ দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভিড়িয়েছিল, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জিতে আসা সুলতান মনসুর এখনো আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই এমপি পদে অধিষ্ঠিত আছেন। অনেকেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে যাওয়ার বিএনপির সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে পারেননি। এজন্য বিএনপিকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। এসব কারণে ড. কামাল হোসেনকেও সমালোচনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু বিএনপি বা ড. কামাল হোসেন কীভাবে জানবেন রাতের বেলাতেই ভোট হয়ে যাবে এবং সে ভোটে আওয়ামী লীগ ৯০% এর বেশি ভোট পেয়ে জিতে যাবে? ভোটটি যদি রাতে না হয়ে দিনে হতো তবে বোঝা যেত ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠন ঠিক ছিল, নাকি ভুল। এতসব কাণ্ডের পরেও ওবায়দুল কাদের ডক্টর কামাল হোসেনকে নিয়ে নির্বাচনের সময় অশুভ তাণ্ডবের যে কথা বললেন, তার যুক্তি কী?
ওয়ান ইলেভেনের অস্বাভাবিক সরকারের কথাও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন। এই ওয়ান ইলেভেনের সরকার যে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেকথা দলটির নেতা-নেত্রীরাই একদা স্বীকার করেছিলেন। সেই সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রণব মুখার্জি তার ’কোয়ালিশন ইয়ার্স’ বইয়ে জানিয়েছিলেন, ওয়ান ইলেভেন সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই তিনি সেই সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নিরাপত্তা, চাকরির নিশ্চয়তা এবং একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছিলেন। ফলে এমন একটি সরকারকে অস্বাভাবিক তারা কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন?
এর মধ্যে অনেক সময় গড়িয়ে গেছে, ডক্টর ইউনূসও আর রাজনীতি বিষয়ে তেমন আগ্রহী নন। তবে অনেকেই মনে করেন, ডক্টর ইউনূস যদি ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতেন তবে সেটা সবদিক দিয়ে ভালো হতে পারতো। ১৬ বছর আগে তার বয়স ছিল সরকার প্রধান হওয়ার উপযুক্ত। দেশ গড়ার ব্যাপারে তার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা ছিল।
২০০৭-২০০৮ সালের সরকারের আগে বাংলাদেশের তিনটি তত্ত্বাবধায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কহীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সে সরকারগুলো আয়োজন করেছিল। এমনকি সমস্ত বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও ২০০৮ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ভালো নির্বাচন করেছিল বলেই সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচনটি করেছিল সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এবং ২০০৭ সালে তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের অধীনে তারা যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেটিও গ্রহণযোগ্যতা পেত না বলেই ধারণা করা যায়। আর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
নানা যুক্তি তুলে অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক সমালোচনা করে থাকেন। কিন্তু আমার মনে হয়, এই ব্যবস্থাটি রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছিল। সাবেক প্রধান বিচারপতিদের সরকার প্রধান হিসেবে নিয়োগের রীতি সমাজে তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করেছিল। তবে একথাও সত্য, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নেওয়ার চেষ্টা করতো এবং তাতে সমস্যাও তৈরি হতো। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সেটা সব সরকারের জন্য কঠিন কাজ ছিল। কারণ সকলে এই বিষয়টির দিকে কড়া নজর রাখত। এ কারণে দলীয় ব্যক্তিকে বিচারপতি বা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সমাজে একটা স্বাভাবিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠার মানসিকতা তৈরি হয়েছিল। যে ব্যাপারটি আজ একেবারেই অন্য রূপ নিয়েছে।
আরেকটি বিষয়ে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার। পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং সেই সরকারে নাগরিক সমাজের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির রীতি এদেশে ধীরে ধীরে নাগরিক সমাজের একটা শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছিল। সমাজে তারা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। তাদের কথা, ভূমিকা সমাজে বেশ কদরও পেত।
হয়তো নাগরিক সমাজের একটি অংশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতার বাসনাও তৈরি হয়েছিল। আমি বলবো, আওয়ামী লীগ সরকার সেই বাসনায় পুরো জল ঢেলে দিলেও নিজেদের পতনের শুরুটা নাগরিক সমাজের লোকেরা নিজেরাই করেছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের মধ্য দিয়ে তারা যদি ক্ষমতার বাসনা বাস্তবায়ন করার দিকে এগিয়ে গিয়ে থাকেন তবে বলতে হবে সেই প্রক্রিয়ায় তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় তারা উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। আমার অনেক সময়ই মনে হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নেতৃত্ব একটি বড় বিষয়। সাবেক প্রধান বিচারপতিদের যে নেতৃত্বের গুণাবলী ও সামাজিক যোগাযোগ থাকে তেমন গুণ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তার সেই গুণ নেই। তিনি দুর্বলচিত্তের একজন ব্যক্তি হিসেবেই সরকারের প্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। সে সময়কার সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদও তাকে যথাযথ সমর্থন দিতে পারেননি। দু’একজন বাদ দিলে ওই সরকারের বেশিরভাগ উপদেষ্টাই অচেনা-অজানা ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি অর্থনীতি ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে তাদের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। ফলে দেশ পরিচালনার ব্যাপারটা প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের ব্যর্থতার কারণে এবং মইন উ আহমেদের শিথিলতার কারণে পুরোপুরি সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তারা দ্রুত সব রাজনৈতিক দলকে ক্ষেপিয়ে তোলেন, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশকে শত্রু বানিয়ে ফেলেন এবং ছাত্র-শিক্ষকসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেন। জনগণের একটা বড় অংশ তাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে দ্রুত তাদেরকে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। দুই বছরের শাসনামলে তেমন কোনো অর্জন ছাড়াই বিদায় নিতে হয়। সেই সরকারের বেশিরভাগ উপদেষ্টার নামও মানুষ ভুলে গেছে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের অন্যতম নির্মাতা হিসেবে যাদের অভিযুক্ত করা হয় সেই প্রথম আলো-ডেইলি স্টার ওই সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়ে একটি কার্টুন ইসুকে কেন্দ্র করে। এবং এটি সামলাতে সেই সরকার বেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, যারা ওই সরকারের পেছনে ছিল বলে বলা হয়, তাদেরকেও সরকারটি কীভাবে ডিজওন করতো।
যাই হোক, ওই সরকারের সকল দুর্নীতি বিরোধী অভিযান, রাজনৈতিক উদ্যোগ, সংস্কার কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এবং তাদের ব্যর্থতার ওপর ভর করে তিন মেয়াদের শাসনকালে আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিতে পেরেছে, নাগরিক সমাজের ভূমিকা সংকুচিত করে আনতে পেরেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে পেরেছে, তেমনিভাবে নিজেদের ক্ষমতাকে আরো সংহত ও একাগ্র করে তুলতে পেরেছে। এ কারণেই দু’দুটি বিতর্কিত নির্বাচন করে ফেলার পরেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নিয়ে এখনও সংশয় দেখা যায় অনেকের মনে।
আমার মনে হয়, ২০০৭ সালে যদি ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা ফজলে হাসান আবেদের মতো নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন, গ্রহণযোগ্য ও তীক্ষ্ণ কোনো ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতেন তবে বাংলাদেশের ইতিহাস এদিকে আসতে পারতো না।
অন্তত সেই সরকারটি গণতন্ত্রের একটা মৌলভিত্তি তৈরি করে দিয়ে যেতে পারতো।
এখন বাংলাদেশের সামনে অনেক বড় বিপদ। কেননা, যে ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন তাদের সকলের বয়স হয়ে গেছে। তারা আর এরকম গুরুদায়িত্বে আসতে চাইবেন না বলেই মনে হয়।
আর সেরকম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দায়িত্ববোধ সম্পন্ন এবং পাবলিক ইমেজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনো ব্যক্তি যদি শীর্ষ পদে আসীন না হন তবে সেটা ওয়ান ইলেভেনের সরকারের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। অনেক রক্তের বিনিময়ে, অনেক ত্যাগ দিতে সহ্য করে বিএনপি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে সফলও হয়, তবে সেই সরকারটি ১৫ বছরের জঞ্জাল অপসারণ করে তিনমাস সময়ের মধ্যে কতটা ভালো নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে সে সন্দেহ থেকেই যায়।
Discussion about this post