মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা দেবে না দেশটি। ওই ঘোষণার প্রায় চার মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনীতিকসহ কয়েকটি পেশার ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মার্কির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, তারা ভিসানীতি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে যে কারও বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছেন। তারা সরকার সমর্থক, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও সেটা মিডিয়াও হতে পারে।
তার এ বক্তব্য নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সরকারপন্থী বলে পরিচিত সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও অ্যাক্টিভিস্টরা পিটার হাসের এ বক্তব্যের সমালোচনা শুরু করেন। সরকারের সমালোচক সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের আরেকটা অংশ একে স্বাগত জানান।
সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদও বিষয়টি পরিষ্কার করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন পিটার হাসকে।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ২৭ সেপ্টেম্বর পিটার হাসকে ই–মেইলে দেওয়া চিঠিতে বলেন, গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে তার মনে এবং সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। সত্যি বলতে ওই মন্তব্য (গণমাধ্যম নিয়ে পিটার হাসের মন্তব্য) তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তাই এ বিষয়ে ব্যাখ্যার অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সব সময় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে অটল। সেখানে এই মন্তব্য তাদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
মাহ্ফুজ আনাম লেখেন, ‘গণমাধ্যমের কাজ হলো লেখা কিংবা সম্প্রচার করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাংবাদিক যা লেখেন বা সম্প্রচার করেন, তার ওপর ভিত্তি করে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কি না? যদি তাই হয়, তাহলে এটি কি বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আওতায় আসে না? গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এখানে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে?’
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী সব সময়ই ব্যক্তিগতভাবে তার এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। সে ক্ষেত্রে ভিসানীতি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে এই নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনীর মূল্যবোধ এখানে কীভাবে প্রতিফলিত হবে?’
এর জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে চায়, তাদের জন্য ভিসানীতি প্রয়োগ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে পিটার হাস বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম- সবার। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে।
পিটার হাস বলেন, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ওই বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে ভিসানীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়, এমন যে কোনো বাংলাদেশির জন্য প্রযোজ্য। গণমাধ্যমকে কেউ মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নিলে তার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।
শনিবার গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশের ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, গণমাধ্যমে ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নীতির পরিপন্থী। বাংলাদেশের গণমাধ্যম উগ্রবাদী শক্তি, জঙ্গি, জামায়াত ইসলামীর মতো যুদ্ধাপরাধীর দল, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলোকে নির্মূল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে। এর ফলে বাংলাদেশ তালেবানের মতো একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি।
বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেন, গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি নিয়ে হাসের বক্তব্যটিকে কট্টরপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বাগত জানিয়েছে। এই পক্ষটি অন্যান্য নীতিতে পশ্চিমাদের নিন্দা করে, মুক্তচিন্তকদের শত্রু মনে করে এবং তারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের দায়মুক্তির পক্ষে। হাসের বক্তব্যকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ‘বাঁশের কেল্লা’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে হাসকে ‘একজন সত্যিকারের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতে এই পেজে ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদের হত্যার পক্ষে নানা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। ফলে, এই পেজে হাসের বিবৃতি নিয়ে উল্লাস আসলে ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকদের জন্য নিগূঢ় বার্তা দেয়।
এতে বলা হয়, ‘আমরা দেখেছি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভিসানীতিতে গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু হাস তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করায় ধারণা করা যায়, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো চূড়ান্ত। এরই মধ্যে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এটির নিন্দা করেছেন। হাসের এই বক্তব্যের কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।’
গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের খবরে শীর্ষ সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশও নিন্দা জানায়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য যথেষ্ট স্বচ্ছ নয় এবং এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে বুধবার বিবৃতি দেন সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল হক (বাবু) ও সাধারণ সম্পাদক ইনাম আহমেদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বহুত্ব দৃঢ়ভাবে দৃশ্যমান। কারণ, গণমাধ্যম সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন মত প্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি করছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কখনোই সুশাসন, গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি। এখানে এমন অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রেক্ষাপট রয়েছে যার মধ্যে গণমাধ্যমের পেশাদাররা কাজ করার জন্য লড়াই করছে যা পশ্চিমা সমাজে হয় না।
বিবৃতি আরো বলা হয়, ‘আমরা জানতে চাই, কী কারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে অবজ্ঞা করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য স্বচ্ছ নয়। এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ নিয়ে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে জনগণের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার এবং গণমাধ্যমের ওপর অদৃশ্য সেন্সরশিপ আরোপ করার একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা যেতে পারে। যা গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রধান স্তম্ভ বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নীতির পরিপন্থি।’
একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, “চিঠি দিয়ে দেশের সংবাদপত্রের সম্পাদকেরা রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এখানে কোন কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে?’ চিঠির জবাবে রাষ্ট্রদূত এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন; বরং গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পক্ষেই কথা বলেছেন তিনি। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এমন অবস্থান আমাদের হতবাক করেছে।’’
এ ইস্যুতে মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভিসানীতির নামে সংবাদমাধ্যমে মার্কিন চাপের প্রতিবাদে’ শীর্ষক সাংবাদিক সমাবেশের আয়োজন ‘জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট’ নামে একটি সংগঠন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকা ও মর্যাদা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণমাধ্যমের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের শামিল। ভিসানীতির নামে হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরে চাপ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীরও বরখেলাপ।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা আবদুল জলিল ভূঁইয়া, কুদ্দুস আফ্রাদ, লায়েকুজ্জামান, মানিক লাল ঘোষ, খায়রুল আলম, আবু সাঈদ, শাহীন বাবু, শাহজাহান সাজু প্রমুখ।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি প্রশ্নে বলেন, বাংলাদেশে তালেবানি ব্যবস্থা চালুর পক্ষে থাকা কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ও বিরোধী নেতারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি উগ্র মতাদর্শের সমালোচক সাংবাদিকদের তালিকাও প্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মী, যুদ্ধাপরাধ-বিরোধী প্রচারকর্মী, সম্পাদক, সাংবাদিক, লেখক, সংখ্যালঘু নেতারা গণমাধ্যমের ওপর সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি অবমাননা হিসেবে দেখছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কেন্দ্রে আছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
ওই সাংবাদিক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের কাছে জানতে চান, তিনি কি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে সমর্থন করেন? ধর্মনিরপেক্ষ জাতির সমর্থনকারী এত বড় উদারপন্থী গোষ্ঠীর উদ্বেগকে কি তিনি সরাসরি অস্বীকার করেন?
জবাবে মিলার বলেন, তিনি গত সপ্তাহে যা বলেছিলেন, তা একটু ভিন্ন ভাষায় আবার বলতে চান। তা হলো, বাংলাদেশিরা যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তা-ই চায়। আর সেই চাওয়া হলো—বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম—সবাই তাদের এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছে যে তারা চায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক। একই চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতি ঘোষণা করেছে, তা এই উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে।
এ দিকে গণমাধ্যমের ওপরও ভিসানীতি প্রয়োগের পক্ষ নেন লেখক, বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি ডয়চে ভেলে’র লাইভ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি অবশ্যই খুশি হয়েছি। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এই দালালের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম কোনো একটা দলকে সমর্থন করতে পারবে না কেন? অনুষ্ঠানের সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন এ প্রশ্ন করলে তার জবাবে অধ্যপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘পৃথিবীর আর কোনো দেশে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে তেল মারা হয় না। তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় এনে প্রশ্ন করা হয়।’
সরাসরি গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার পক্ষ না নিলেও সাংবাদিক কামাল আহমেদ সমালোচনা করেন এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া ১৯০ ব্যক্তিকে নিয়ে। তিনি নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘‘এই যে ১৯০ জন ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ গণমাধ্যমও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ার বিষয়ে উদ্বেগ ও নিন্দা জানালেন, তাঁদের অধিকাংশই প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল (কার্যত বন্ধ করে দেওয়া) ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে তাঁর পদ ও পেশা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। সেটা বেশিদিন আগের কথা নয়। সেগুলো কি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল না? এ ধরনের ভূমিকাকে গণতন্ত্র পরিপন্থী গণ্য করা কীভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়? ’’
ফেসবুকে বিভিন্নজন বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান কর্তৃতবাদী সরকারের সমালোচনা সংবাদমাধ্যমে প্রায় হয় না বলতে গেলে। জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম বর্তমান সরকারেরই পক্ষাবলম্বন করে। যার ফলে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি জনস্বার্থও রক্ষা হয় না। এ ছাড়া ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হলেও সংবাদমাধ্যমে তার প্রতিফলন কমই দেখা গেছে। আগামী নির্বাচনেও এসব সংবাদমাধ্যম থেকে ভোটাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ কিছুটা হলেও সাংবাদিকদের ওপর নিরপেক্ষ থাকার চাপ হিসেবে কাজ করবে।
Discussion about this post