গত মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ইসরায়েলের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের তরফ থেকে একটি পরিকল্পনা মিডিয়াতে ফাঁস হয়। তাতে গাজা থেকে পুরো ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে মিশরে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়, গাজার সকল অধিবাসীকে বর্ডারের ওপারে সিনাই উপত্যকায় পুশইন করা হবে। সেখানে প্রথমে তাঁবু শহর তৈরি করা হবে এবং পরে স্থায়ী শহর গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা ‘হিউম্যানিটারিয়ান করিডর’ তৈরি করা হবে যা ইসরায়েলিদের জন্য একটা নিরাপদ এলাকা তৈরি করবে। এর উদ্দেশ্য, ফিলিস্তিনিরা যেন আর ইসরায়েলি এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।
অবশ্য এই পরিকল্পনা প্রকাশের পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু উষ্মা প্রকাশ করে বলেছে, এটা একটা কনসেপ্ট পেপার বা ধারণাপত্র মাত্র। এটা অনেকগুলো সম্ভাবনার মধ্যে একটি এবং মিলিটারির পক্ষ থেকে সরকারকে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
লক্ষ্য করার মতো বিষয় যে, ইসরায়েলী ডিফেন্স মিনিস্ট্রি ইতিমধ্যে ১০ লক্ষের বেশি গাজাবাসীকে উত্তরের অর্ধেক এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ এলাকায় তারা এখন স্থল অভিযান এবং আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এ অভিযানের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা। হামাস ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর থেকে গাজা পরিচালনা করে আসছে এবং ইসরায়েলের ভেতর ৭ অক্টোবরের আক্রমণ পরিচালনা করেছে। সেই আক্রমণে ১৩০০ জনের মতো ইসরায়েলী নিহত হয়।
মিশরের পররাষ্ট্র দপ্তর ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু গ্রহণে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। তারা অনেকদিন ধরেই এই ভয় করে আসছে। এর আগেও ব্যাপক সংখ্যক ফিলিস্তিনীকে মিশরে পুশইন করা হয়। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মিশরের সিনাই উপত্যকার বদলে ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে ফিলিস্তিনিদের স্থান দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনীদের সরানোর আগেই ইতিমধ্যে ১২,০০০ এর মতো ফিলিস্তিনীকে ইসরায়েল হত্যা করেছে যার মধ্যে প্রায় ২০০০ এরও বেশী মৃতদেহ ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো চাপা পড়ে আছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রায় ৮ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে। ২০২৩ সালে ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ ফিলিস্তিনীকে গাজায় বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েলীরা। এ সংখ্যা শীঘ্রই হয়তো ১৯৪৮ সালের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
বর্তমান সংকট ফিলিস্তিনিদের জন্য দ্বিতীয় নাকবা বা দ্বিতীয় বিপর্যয় এবং এটি প্রথমবারের থেকেও ভয়াবহ হতে পারে। পার্থক্য হলো এখন মানুষ লাইভ টিভিতে এই বিপর্যয় দেখছে। গতবার এ সুযোগ তৈরি হয়নি।
Discussion about this post