বলিউড ফিল্মের তামিলাইজেশন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তামিল ফিল্মগুলোতে যেমন হিরোর একটা লার্জার দ্যান লাইফ পোর্ট্রোয়াল হয়, তেমন শুরু হতে যাচ্ছে বলিউড ফিল্মেও।
জওয়ানের গল্পটা আহামরি কিছু না। সিস্টেমের বিরুদ্ধে একজন মানুষের যুদ্ধের গল্প। রাষ্ট্রের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতি, আর সেই দুর্নীতির কারণে পিষ্ট হওয়া মানুষের বিদ্রোহী হয়ে ওঠার গল্প।
এমন অনেক ফিল্মই হয়েছে।
তারপরেও বলব, এই সিনেমা অনন্য হয়ে থাকবে। কারণ এর ট্রিটমেন্ট। দক্ষিণী ট্রিটমেন্ট। লার্জার দ্যান লাইফ প্রেজেন্টেশন।
সিনেমাটা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলবো, এটা সিনেমা হলে গিয়ে দেখার মতো। এমন অনেক সিন আছে, যেখানে হল ভেসে যাবে তালির আওয়াজে। বাজবে সিঁটি। যেগুলো সিনেমা হল ছাড়া এনজয় করা যায় না।
নায়কের এন্ট্রি, বেশ কিছু ডায়ালগ, সেসব ডায়ালগের ডেলিভারি, কিছু অ্যাকশন সিন, তালি আর সিঁটিতে মুখর করে দেয়ার মতো। ফিল্মে যদি দুর্বল কিছু থেকে থাকে, তা হচ্ছে এর ভিলেইনের ক্ষমতা। বেজায় দুর্বল কিসিমের ভিলেইন। নায়কের দক্ষতার কাছে একেবারেই শিশু। ঠিক সেয়ানে সেয়ানে লড়াইটা হয়নি।
তবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার সিনেমাটা খুব বোরিং লাগে না। হোস্টেজ ড্রামা তেমন টানটান না হলে একসময় বোরিং লাগতে শুরু করে, রাইটার, পরিচালক এটলি সেটা করেননি।
অনেকগুলো গল্প বলতে তাই তিনি বেশ কিছু হোস্টেজ ড্রামা প্লট তৈরি করেছেন। একটা শেষ করে আরেকটায় নিয়ে গেছেন। মাঝে গুঁজে দেওয়া কিছু রোমান্স আর কিছু গান অদরকারি মনে হয়েছে।
সব মিলিয়ে, বলা যায়, একটা মাস এন্টারটেইনার। আড়াই ঘণ্টা এঞ্জয় করার মত। ‘এজ অফ দ্যা সিট’ টাইপ থ্রিলার না হলেও, ‘আয়েশ করে হেলান’ দিয়ে বসার মত ডালও না। গল্পে বেশ কিছু অসংগতি থাকলেও, ওসব গায়ে লাগে না। বরং সিনেমায় দেখানো সবকিছুই বিশ্বাসযোগ্য লাগে। দর্শককে নিজের সাথে টেনে নেয়।
তবে সিনেমাটা আলোচিত, সমালোচিত বা নিন্দিত হবে অন্য কারণে। ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকারের সাথে একেবারে হেড অন কলিশনে গিয়েছে ফিল্মটা। গত দশ বছরে বিজেপির শাসনামলে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা এখানে পোর্ট্রে করা হয়েছে আর সরকারকে দোষী দেখানো হয়েছে। সরাসরি নাম না বললেও, ঘটনার এতোটাই মিল দেখানো হয়েছে যে কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না, কাকে উদ্দেশ্য করে বলা।
যাই হোক, গল্পের নায়ক আসলে কে, সেটা বললে স্পয়লার দেয়া হয়ে যাবে। তাই বলছি না। শুরুতে নায়ককে একটা অবয়বে দেখা গেলেও খুব পরিষ্কার করা হয় না সে আসলে কে। সিনেমা বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে বোঝা যাবে নায়ক শাহরুখ খান আসলে কে।
যে দুটো ঘটনা সরাসরি বিজেপি সরকারে দিকে আঙ্গুল তুলেছে এর প্রথমটা শুরু হয় একটা হোস্টেজ ড্রামায়। খুলতে থাকে গল্পের জট। কিছুদিন আগে এক ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের বিশাল অংকের লোন রাইট অফ করে দেয়া হয়। অথচ ভারতের বিশাল সংখ্যক কৃষকের ছোট ছোট লোন মাফ করা হয় না। ব্যাপারটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় আর বোঝানো হয় এসব ধনকুবের নিজের অর্থের প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিবিদদের দিয়ে নিজের লোন মাফ করায় আর গরীব কৃষক ব্যাংকের লোনের টাকা ফেরত দিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একসময় শেষ হয় এই হোস্টেজ ড্রামা।
এরপরে শুরু হয় আরেক হোস্টেজ ড্রামা। কিছুদিন আগে কোভিডের সময় উত্তর প্রদেশে হয়ে যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার কেলেঙ্কারির ঘটনাটা এখানে আনা হয়। সেই সময় উত্তর প্রদেশ সরকার এটাকে একজন ডাক্তারের দোষ হিসেবে দেখিয়ে সেই ডাক্টার কফিলকে জেলে পাঠায় আর ব্যাপারটার কাভার আপ দেয়ার চেষ্টা করে। সেই একই ঘটনায় এবার দোষী দেখানো হয় রাজনীতিবিদকে আর ডাক্তারকে নির্দোষ এবং ভিক্টিম। যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল বাচ্চাগুলোকে বাঁচাতে।
এভাবে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে ফিল্মটা। যদিও এমন দুর্নীতি সব সরকারের আমলেই ঘটে তারপরও ঘটনাগুলোর সাথে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রচণ্ড মিল, সিনেমাটাকে একটা অ্যান্টি-বিজেপি প্রজেক্ট হিসেবেই দেখবে বিজেপি ও এর ক্যাডাররা। বয়কটের আহ্বান এলেও অবাক হবো না।
সব মিলিয়ে বলবো, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মতো টপিক নিয়ে অনেক ফিল্মই হয়, হচ্ছে, হবে। কিন্তু এমন একটা ক্লিশে টপিক নিয়ে এমন আকর্ষণীয় ফিল্ম বানানো আসলেই চ্যালেঞ্জিং কাজ। ফিল দেয়া হয়েছে, অ্যাকশন ফিল্মের কিন্তু ফাঁকে ফাঁকে ম্যাসেজ দেওয়ার কাজটাও রাইটার এটলি ভালভাবেই সেরেছেন।
Discussion about this post