- ১৯৬৯ সালে তোফায়েল আহমেদ ছিলেন ডাকসু ভিপি এবং ছাত্রলীগ সভাপতি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বরের পরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখনও স্বাধীনতা ছিল অপূর্ণ। কারণ বঙ্গবন্ধু তখনও পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব, ২৫ মার্চের ঘটনাবলি, মুজিব বাহিনীর কর্মতৎপরতা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বরে।
মাহবুব মোর্শেদ : মূলত ১৯৭১-এর ডিসেম্বর নিয়ে, ডিসেম্বরের ঘটনাবলি নিয়েই আপনাকে প্রশ্ন করব।
তোফায়েল আহমেদ : ডিসেম্বরের ঘটনাবলির কথা বলতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একাত্তরের ডিসেম্বরের আগের কিছু উজ্জ্বল সময়ের কাছে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ধাপে ধাপে তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি ২১ দফা পেশ করেন। ২১ দফায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি ফুটে উঠেছিল। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যে সংগ্রাম তিনি করেছিলেন- ১৯৬০-এর দশকে তা মোটামুটি সমস্ত বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিল। আমার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশের দিনগুলো। ৬ দফা পেশ করার পর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠকে যখন স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেদিন আমরা আবার জেগে উঠেছিলাম। আমরা ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করি। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিলের জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করি। আমি তখন ডাকসুর ভিপি, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র। ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন থেকে মাত্র ৫০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, ২০ জানুয়ারি আসাদ শহীদ হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষের সামনে আসাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়ে বলেছিলাম, আসাদ তুমি চলে গেছ, তোমার এই রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না। ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টনে বিশাল জনসমুদ্রে সভাপতি হিসেবে ভাষণ দেওয়ার পর স্লোগান উঠেছিল- শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মুজিব তোমায় মুক্ত করব। শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মাগো তোমায় মুক্ত করব। অনেক রক্ত- আসাদ, মতিউর, মকবুল, রুস্তম, ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হকের রক্ত, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহার রক্তের মধ্য দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি জনসভা থেকে যখন আলটিমেটাম দিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের নেতা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে হবে, তখন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বাংলার জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিল। রেসকোর্সে ২৩ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম ঐক্যপরিষদের ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসভায় জাতির পক্ষ থেকে আমিই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম। ‘৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করল না। তারপর এলো ১ মার্চ। সেদিন হোটেল পূর্বাণীতে বঙ্গবন্ধু সভা করেন। আমিও ২৭ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় উপস্থিত থেকেছি। ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের পর ভোলা থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্ধাহারে-অনাহারে আমাদের লাখ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে, এবার যদি রক্ত দেই আমরা বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দেব। ৭ মার্চ ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিরীহ বাঙালিকে সশস্ত্র বাঙালিতে পরিণত করেছিলেন একথা বলে- ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।
মাহবুব মোর্শেদ : ৭ মার্চের ভাষণের পর কি আপনাদের প্রস্তুতি শুরু হলো?
তোফায়েল আহমেদ : ৭ মার্চের পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের দায়িত্ব দিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং আমাকে। পরে এটি মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত হয়। আমরা চারজন নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে নিই। কেউ ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, কেউ যুব সমাজকে সংগঠিত করা, কেউ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের একত্র করার দায়িত্ব পেলেন। আতাউল গনি ওসমানী সাহেবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আমাকে ট্যাগ করে দিলেন। ১৭ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে আলোচনা করতেন আমাদের তার সবকিছুই অবহিত করতেন। আমাদের তিনি সবসময় বলতেন- তোমরা প্রস্তুত হয়ে যাও। ইয়াহিয়া খান সময় নষ্ট করছে। সে সময় নিচ্ছে। আমারও সময় দরকার। এ আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। তখন আমরা কেরানীগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে অস্ত্র ট্রেনিং শুরু করলাম। নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন প্রমুখ ছাত্রনেতা ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেন আর আমরা যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করি। একত্রে বসে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এরপর এলো ২৫ মার্চ।
মাহবুব মোর্শেদ : ২৫ মার্চ আপনি ৩২ নম্বরে ছিলেন?
তোফায়েল আহমেদ : ২৫ মার্চ দিনের বেলা আমি ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে সারাক্ষণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই ছিলাম। সবাইকে তিনি বিদায় করে দিয়ে যার যার কাজে যেতে বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন, একজন মানুষ হিসেবে জাতিকে যা দেওয়া দরকার তা আমি দিয়েছি। সেদিন ছিল হরতাল। সফলতার সঙ্গে আমরা হরতাল পালন করি।
মাহবুব মোর্শেদ : আপনাকে কিছু বললেন?
তোফায়েল আহমেদ : আমাকেও বললেন, তোমার মনে হয় চলে যাওয়া উচিত। আমি বললাম, আপনি যাবেন না? তিনি বললেন, আমিই-বা যাব কেন? আমি তো নেতা। আমি তো যেতে পারি না। ওরা এসে যদি আমাকে না পায় তাহলে ওরা সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যাবে। ঢাকা শহরকে পুড়িয়ে ওরা ছারখার করে দেবে। লাখ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করবে। বরং আমি থাকব। তোমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গায় চলে যাও। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে অনেক তৃপ্ত মনে হয়েছিল। বলেছিলেন, আজ একটা সফল হরতাল হয়েছে। এই প্রথমবার বাঙালিদের কথামতো বাংলাদেশ চলছে। আমি যা বলেছি, মানুষ তা গ্রহণ করেছে। এরপর আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
মাহবুব মোর্শেদ : কখন?
তোফায়েল আহমেদ : এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি এবং মনি ভাই বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আবার গেলাম। গিয়ে দেখি তিনি তার ঘরের মধ্যে পায়চারি করছেন। আমাদের দেখে বললেন, আবার তোমরা এসেছ? আমাকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিলেন। আরও প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশ দিয়ে তিনি বললেন, তোমরা যাও। আমি দোয়া করি। আমরা তাকে সালাম করলে তিনি আমাদের বুকে টেনে নিলেন।
মাহবুব মোর্শেদ : আপনাদের সঙ্গে আর কেউ দেখা করতে গিয়েছিলেন?
তোফায়েল আহমেদ : ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করা শেষ ব্যক্তি ছিলাম আমরা দু’জন। আমাদের আগে ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ওরা যখন ক্র্যাকডাউন করবে আমি তখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেব।
মাহবুব মোর্শেদ : ৩২ নম্বর থেকে বেরিয়ে?
তোফায়েল আহমেদ : ওখান থেকে গিয়ে মনি ভাইয়ের ফকিরাপুলের বাসায় আমরা থাকলাম। রাত ১২টা ১ মিনিটে আর্মি যখন ক্র্যাকডাউন শুরু করল বঙ্গবন্ধু তখন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বললেন, আজ থেকে আমার দেশ স্বাধীন। যতক্ষণ পর্যন্ত হানাদারমুক্ত করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। পাক আর্মি এরপর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।
মাহবুব মোর্শেদ : আপনারা ঢাকা ছাড়লেন কবে?
তোফায়েল আহমেদ : ২৭ তারিখে ২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করার পর মনি ভাইয়ের বাসা থেকে আমরা বের হই। এ ইউ আহমদের ভক্সওয়াগন গাড়িতে করে আমরা রওয়ানা হয়েছিলাম। গুলিস্তান পর্যন্ত যেতে পেরেছি। তারপর আর যেতে পারিনি। রাস্তা ছিল মানুষে পরিপূর্ণ। এরপর হেঁটে গেলাম সদরঘাট। নদী পার হয়ে গেলাম কেরানীগঞ্জের বোরহানউদ্দিন গগন সাহেবের বাড়িতে। ২৯ তারিখ গগন সাহেবের বাড়ি থেকে আমরা প্রথমে নবাবগঞ্জ, তারপর মানিকগঞ্জ গেলাম। সেখান থেকে ইঞ্জিনের নৌকায় করে আমরা সিরাজগঞ্জ গেলাম। ড. আবু হেনা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি যে পথে কলকাতা গিয়েছিলেন সে পথেই আমরা এগোতে থাকলাম।
মাহবুব মোর্শেদ : কলকাতা যাওয়ার কোনো নির্দেশনা কি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন আপনাদের?
তোফায়েল আহমেদ : ১৯৭১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু তার চার কলিগ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামানকে ডেকেছিলেন। আমাদের চারজনকেও; শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং আমাকে। ডেকে তিনি একটা ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছিলেন। ঠিকানাটি হলো চিত্তরঞ্জন ছুতার, ভবানীপুর, ২১ নং রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, কলকাতা। এই ঠিকানায় তিনি আমাদের উঠতে বলেছিলেন। তখন কলকাতা, বনগাঁ এবং আগরতলায় আমাদের জন্য বাড়ি ঠিক করা হয়েছিল। হিলি বর্ডার পার হয়ে ফারাক্কা ব্যারাজের ওপর দিয়ে আমরা এপ্রিলের ৪ তারিখে কলকাতায় পৌঁছেছিলাম।
মাহবুব মোর্শেদ : কলকাতায় আপনারা প্রাথমিকভাবে কী কাজ করলেন?
তোফায়েল আহমেদ : কলকাতায় গিয়ে আমরা বিএলএফকে চার ভাগে ভাগ করলাম। আমাদের প্রশিক্ষণ হতো দেরাদুনের তান্দুয়ায়।
মাহবুব মোর্শেদ : বিএলএফে আপনার দায়িত্ব কী ছিল?
তোফায়েল আহমেদ : আমার অধীনে ছিল ৭টি জেলা- পাবনা, বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী। আমি থাকতাম কলকাতা হেডকোয়ার্টারে। যা রসদ আসত তা সেক্টরগুলোতে বণ্টন করতাম। কোনো ভুল বোঝাবুঝি যাতে না হয় সেজন্য বিএলএফ ও এফএফের মধ্যে কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করতে হতো আমাকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আমরা ভারতীয় কূটনীতিক ডিপি ধরের সঙ্গে বহুদিন মিটিং করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ উপদেষ্টা ডিপি ধর মুজিবনগর সরকার এবং আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন। আমাদের প্রয়োজন এবং চাহিদা সম্পর্কে অবগত হতেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেরাদুনে আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেন জেনারেল এস উবান। আর কলকাতায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন মি. নাথ। আমাদের তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে যেতেন। আর্মির তরফ থেকে আমাদের সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করতেন জেনারেল সরকার। ভারত আমাদের অর্থ, অস্ত্র এবং আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য ভারতের কাছে আমরা ঋণী।
মাহবুব মোর্শেদ : মুজিব বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর মধ্যে কি কখনও কোনো দ্বিমত হয়েছিল?
তোফায়েল আহমেদ : না এমনটি হতো না। আর হলেও সেক্টর কমান্ডারের সঙ্গে বসে আমরা সেটা সমাধান করতাম।
মাহবুব মোর্শেদ : কখন আপনারা বুঝলেন দেশ মুক্তির দ্বারপ্রান্তে?
তোফায়েল আহমেদ : নভেম্বর থেকেই আমরা বুঝতে পারলাম সময় আর নেই। ডিসেম্বর মাস আমাদের আকাঙ্ক্ষার মাস। ডিসেম্বর মাসেই আমরা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলাম, দেশ স্বাধীন হবেই। বাংলা মাকে মুক্ত করার যে স্লোগান আমরা দিয়েছিলাম ১৬ ডিসেম্বর তা বাস্তবায়িত হলো।
মাহবুব মোর্শেদ : ১৬ ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ হচ্ছে এ খবরটা আপনি কখন পেয়েছিলেন?
তোফায়েল আহমেদ : ৬ ডিসেম্বর আমরা মুক্ত যশোরে আসি। পাকবাহিনী যখন একের পর এক বিভিন্ন জায়গায় পর্যুদস্ত হচ্ছিল, তখন আমরা ধরেই নিয়েছি ওরা আত্মসমর্পণ করবে। সপ্তম নৌবহর প্রেরণকেও আমরা ভয় পাইনি। পাকবাহিনী যদি আরও দেরি করত তাহলে তাদের ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতো। তাই বাধ্য হয়ে ওরা আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের সময় আমি তাজউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে ছিলাম।
মাহবুব মোর্শেদ : আপনারা সবাই তখন থিয়েটার রোডে ছিলেন?
তোফায়েল আহমেদ : না। নিজ নিজ সেক্টর মুক্ত হওয়ার পর বিএলএফের অন্য নেতারা নিজ নিজ সেক্টরে অবস্থান করছিলেন। শুধু আমি কলকাতায় ছিলাম। ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা মিলিত হই।
মাহবুব মোর্শেদ : আপনারা ঢাকা ফিরেছিলেন কবে?
তোফায়েল আহমেদ : ১৮ ডিসেম্বর আমি এবং রাজ্জাক ভাই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এলাম।
মাহবুব মোর্শেদ : ঢাকায় এসে?
তোফায়েল আহমেদ : সোজা চলে গেলাম শ্রদ্ধেয়া ভাবী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাছে। ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর রোডে যেখানে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তখনও আমাদের স্বাধীনতা অপূর্ণ। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি তিনি। প্রকৃতপক্ষে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম ১০ জানুয়ারি, যেদিন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসেছিলেন।
Discussion about this post