অন্যান্য দেশের সঙ্গে শাহরুখ খানের নতুন মুভি ‘জাওয়ান’ মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশে। রবিবার (২৭ আগস্ট) তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পায় নতুন এ মুভি। তবে বাইরে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মুক্তি পেলেও বাংলাদেশের হলগুলোতে দেখা যাবে শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর)। কারণ বাংলাদেশে শুক্রবারে নতুন ছবি মুক্তি পায়।
ভারতের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশেও ‘জাওয়ান’ মুক্তির দাবিতে গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে ‘এসআরকে ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ নামে শাহরুখের বাংলাদেশি ফ্যান কমিনিউটি ‘বাংলাদেশ ইজ ওয়েটিং ফর জওয়ান’ এবং ‘উই ওয়ান্ট জওয়ান টু রিলিজ ইন বাংলাদেশ’ ব্যানার হাতে বসুন্ধরা সিটির সিনেপ্লেক্সের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়।
শনিবার (২৭ আগস্ট) এ-সংক্রান্ত একটি পোস্টের উত্তর দেন শাহরুখ। টুইটারে তিনি লিখেন, ‘থ্যাংক ইউ বয়েজ অ্যান্ড গার্লজ।’ সঙ্গে জুড়ে দেন হ্যাশট্যাগ জাওয়ান। এরপর শনিবার জাওয়ান মুক্তির সিদ্ধান্ত আসে।
যদিও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা মুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। এ ইস্যুতে নানা কর্মসূচিও পালিত হয়। হয় বাদানুবাদও।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৫ সালে সাময়িকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। সে বছর প্রথম বলিউড সিনেমা হিসেবে মুক্তি পেয়েছিল সালমান খানের সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’।
আর এরপরই শুরু হয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে বলিউড সিনেমা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হয়। ঢাকার জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান মূলত এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনকারী শিল্পীদের মতামত ছিল, বলিউড সিনেমা প্রদর্শন করা হলে বাংলাদেশের সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পড়বে।
একপর্যায়ে প্রতিবাদকারীরা বলিউড সিনেমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন এবং প্রেক্ষাগৃহের বাইরে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের বলিউড সিনেমা না দেখতে অনুরোধ করতে থাকেন। এ ঘটনায় দেশের বলিউড সিনেমার প্রদর্শকরা পাল্টা প্রতিবাদ করেন এবং শাকিব খানের সিনেমা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন।
ওই বছর ‘ওয়ান্টেড’ ছাড়াও বরং আমির খানের সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ এবং শাহরুখ খানের ‘মাই নেইম ইজ খান’ বাংলাদেশে মুক্তি পায়। তবে বাংলাদেশের বিনোদন জগতের একটি বড় অংশের বাধার মুখে বলিউড সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা আবার বহাল রাখা হয়।
পরে বাংলাদেশের সিনেমা সম্পর্কিত ১৯টি সংগঠন বছরে ১০টি করে বলিউড সিনেমা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের ব্যাপারে একমত হয়। যার প্রেক্ষিতে মে মাসে বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ডের গেট পেরিয়ে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ মুক্তি পায় বাংলাদেশে।
সাফটা চুক্তির আওতায় গত ১১ এপ্রিল পাঁচটি শর্ত মেনে দুই বছরের জন্য ১৮টি হিন্দি সিনেমা আমদানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম হিন্দি সিনেমা হিসাবে বাংলাদেশে মুক্তি পায় শাহরুখ-দীপিকা-জন অভিনীত ‘পাঠান’।
সেই সময় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া শর্তে বলা হয়, মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে হিন্দি ছবি চালানো যাবে না। বছরের দুই ঈদে মুক্তি দেওয়া যাবে না কোনো হিন্দি ছবি। বছরে ৬টি বা ১০টি ছবি আসতে পারবে। হিন্দি ছবি আমদানির মেয়াদকাল হবে দুই বছর।
তখন এক বৈঠকের পর পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ বলেন, ‘হিন্দি ছবি আমদানির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। আমাদের হল বাঁচাতে, সিনেমার রক্তধারা প্রবাহিত করার জন্য ভারতীয় হিন্দি ছবি চলবে কি চলবে না, এ ব্যাপারে আমি মিটিংয়ে কমিটির সবার মতামত চেয়েছিলাম। আগের কিছু শর্তের সঙ্গে বর্তমান কিছু শর্ত যোগ করে হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও বিশ্বাসী করি, এখন সিনেমা হল বাঁচানোর জন্য হিন্দি ছবির দরকার আছে। এর মধ্যে আমার কোনোই দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার ছবিতে দেশের কথা বলেছি। সেই দৃষ্টিকোণ এখনো নিজেকে পাল্টাইনি আমি। দেশের প্রতি ভালোবাসার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, এই মুহূর্তে যুবসমাজকে যদি সিনেমা হলে না ঢোকানো যায়, তাহলে ক্ষতি হয়ে যাবে। তা না হলে দেশের নীতিনির্ধারকেরা দায়ী থাকবেন, প্রজন্ম তাঁদের দায়ী করবে।’
তবে চলচ্চিত্র তারকা ডিপজল পাঠান মুক্তির বিরোধিতা করে বলেন, ‘আগে যখন সিনেমায় অস্থিরতা ছিল, তখন তো আমরাই টেনে নিয়ে গেছি বাংলা সিনেমাকে। হিন্দি সিনেমা সমাধান নয়। এ ধরনের চিন্তা করা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমার বিশ্বাস বাংলা সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবে। হিন্দি সিনেমা নয়, বাংলা সিনেমা দেখতে চায় এদেশের মানুষ। পাঠান সিনেমার লাভের অংশ কেন শিল্পী সমিতি চাইবে? পারলে নিজেরা কিছু করে দেখাক। আমি হিন্দি সিনেমার বিপক্ষে আছি, থাকব।’
গত আট বছরে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা প্রদর্শন করে অবশ্য খুশি নন হল মালিকরা। তাদের বক্তব্য ছিল একই দিনে মুক্তি না দিলে সিনেমা দেখিয়ে লাভ হয় না।
যেমন গত ২৫ আগস্ট দেশের ৩২ সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া সালমান খানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ সিনেমা তেমন সুবিধা করতে পারছে না। স্টার সিনেপ্লেক্সের ৫টি শাখায় প্রতিদিন ১৮টি শো প্রদর্শিত হচ্ছে ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ হিন্দি সিনেমাসহ কোনো সিনেমাই আমাদের এখানে সেই অর্থে চলছে না। ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ কিছুটা পুরোনো সিনেমা, ওটিটি মাধ্যমেও আছে। সেই কারণে হয়তো দর্শক আসছে না।’
সে হিসেবে ‘জাওয়ান’ মুক্তি পাচ্ছে একই দিনে। এখন দেখার পালা, হলগুলো এ সিনেমা প্রদর্শন থেকে কতটা লাভ ঘরে তুলতে পারে।
প্রায় ৩০০ কোটি রুপি বাজেটে ‘জাওয়ান’ পরিচালনা করেছেন তামিল নির্মাতা অ্যাটলি কুমার। এই প্রথম দক্ষিণী নির্মাতার পরিচালনায় কাজ করলেন কিং খান। এতে তার নায়িকা নয়নতারা। এছাড়াও আছেন বিজয় সেথুপতি, সানিয়া মালহোত্রা, প্রিয়ামনি প্রমুখ। দীপিকা পাড়ুকোন ও থালাপতি বিজয়কে দেখা যাবে অতিথি চরিত্রে।
Discussion about this post