৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফর করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল
বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের শায়েস্তা করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দিয়ে, তাদের নেতাদের গ্রেফতার-গুম-নিষ্ক্রিয় করে একেবারে চুপ করিয়ে দিয়েছে, যেভাবে তাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে সর্বস্বান্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসে তেমন ঘটনা আর দেখা যায়নি। দলটির সভা -সমাবেশ, মিটিং, মিছিল এমনকি রেস্টুরেন্টে একত্রে খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারেও একই রকম আন্তরিকতা সহকারে দমননীতি প্রয়োগ করেছে। কখনো উপঢৌকন দিয়ে হেফাজতে ইসলামকে কাছে টেনেছে, কখনো তাদের নেতাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের বন্ধু বানানো হয়েছে, তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং কখনো বল প্রয়োগ করে তাদের নিবৃত করা হয়েছে।
হিজবুত তাহরিরসহ বিভিন্ন কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলোকেও কঠোর হাতে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে সরকার।
জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
বলা চলে, সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ন্যারেটিভের আওতায় ভারত ও পাশ্চাত্যের বন্ধুদের চাওয়াগুলো আওয়ামী লীগ পরিপূর্ণভাবে যেমন পূরণ করতে পেরেছে, তেমনিভাবে এই বিষয়গুলোকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতেও পেরেছে। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত ট্যাগিং তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফলভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই হিসাব-নিকাশ বুঝতে বিএনপি অনেক দেরি করে ফেলেছিল। তারা জামায়াতে ইসলাম ইসলামীর সঙ্গে জোট ভাঙতে ভাঙতে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধই শেষ হয়ে গেছে। ফলে ক্ষমতার লড়াইয়ে বিএনপি অনেক পিছিয়ে গেছে। কিন্তু, এই জোট অনেক আগে ভেঙে দিলে বিএনপি যেমন ক্ষমতায় ফিরতে পারতো তেমনি জামায়াত লাভবান না হলেও হয়তো এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। এই জিনিসটা বিএনপি এখন বুঝতে পারলেও জামায়াতের লোকজন কখনোই বুঝতে পারেনি।
যাই হোক, এসব আলোচনা এখন অপ্রাসঙ্গিক।
তবে, একটি কথা বলে রাখা ভালো। আমেরিকা ও ইউরোপ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এলেও এ বিষয়ে তাদের হ্যাংওভার পুরোপুরি কেটে গেছে তা বলা যাবে না। তবে তাদের প্রায়োরিটি তালিকায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ আর নেই। কিন্তু আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত নানা কারণে এখনো সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নীতি অবলম্বন করে চলেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তারা এই আবহের মধ্যে আরও কিছুদিন থাকতে চায় বলে মনে হয়।
এরকম একটি প্রেক্ষাপটে ভারত কোনোভাবেই চাইছে না বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির উত্থান ঘটুক। কেউ খেয়াল করেছেন কি না জানি না, আওয়ামী লীগের যে প্রতিনিধি দল কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সম্প্রতি ভারত সফর করে এলেন তারা ভারতে যাদের সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের অনেকেই দুটো বিষয় নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
একটি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক।
আরেকটি জামায়াতে ইসলামীর উত্থান।
মূলত চীন বিষয়ে ভারতকে আশ্বস্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারত সফরে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
কিন্তু এই সফরে ভারতীয় কর্তাব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের কাছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামপন্থীদের উত্থান বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কেন?
আওয়ামী লীগ তো জামায়াতসহ বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের দমন করার ব্যাপারে সবচেয়ে আন্তরিকতা দেখিয়েছে। তাহলে তাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করার কারণ কি?
তবে কি ভারত ধারণা করছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশে এখনকার জটিলতা থেকে বের হতে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলোকে মাঠে নামাতে পারে? ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতার পেছনে সরকারের সমর্থন থাকার যে আলোচনা বাজারে চালু আছে তা কি ভারত আমলে নিচ্ছে?
Discussion about this post