বরিশাল বিভাগের সর্বপশ্চিমে পিরোজপুর জেলা। আমড়া, পেয়ারার ফলনের জন্য এই জেলার বেশ সুনাম। শিক্ষার দিক দিয়েও ভাল করেছে জেলাটি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুসারে পিরোজপুরে সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি। এখানে জনসংখ্যার ৮৮.৭% সাক্ষর। ভাসমান পেয়ারা বাজারের জন্যও ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে পিরোজপুর আকর্ষণীয় স্থান। অনেক দিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরেও পিরোজপুর জেলা সদরের রাস্তাঘাট ভোগান্তির অপর নাম। বর্ষার মৌসুমে পিরোজপুর সদরের সড়কপথ রীতিমতো নালায় রূপান্তরিত হয়। বর্ষা মৌসুমে সদরের ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলাচলে এলাকাবাসীর ভোগান্তির সীমা থাকে না।
পিরোজপুর জেলা শহরে কিছু মূল সড়কে ড্রেন থাকলেও বেশির ভাগ সড়কেই ড্রেন নেই ৷ বর্ষাকালে হালকা বৃষ্টিপাতেই সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যার জন্য এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এলাকার মূল শহরের সড়ক ছাড়াও আবাসিক এলাকাগুলোর সড়কের অবস্থা আরও বেহাল। সেখানে নেই কোনো বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্য, জলাবদ্ধতা মিলেমিশে তৈরি হয় মশার আবাসস্থল। এছাড়াও কিছু সড়ক আধাকাঁচা হওয়ায় এলাকাবাসী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে পারে না। জীবন-জীবিকার জন্য রোজ বের হতে হয় এমন চাকুরিজীবী, শিক্ষার্থী এবং শ্রমিকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। পুরো সড়কজুড়েই বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে রয়েছে এসব সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা। তাই এসব আবাসিক এলাকার সড়কে রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করতে চায় না। এমন অবস্থা প্রায়সময়ই শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে ব্যাঘাত ঘটে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারকে জানানোর পরও নেই কোনো উদ্যোগ। কয়েক দফায় স্থানীয় সরকারের বদল ঘটলেও সদরের সড়কগুলোর কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষাকালে মশার উপদ্রবও বেড়ে অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডেঙ্গু নিয়েও নেই কোনো তৎপরতা। রাস্তা-ঘাটে এমন জলাবদ্ধ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর সবচেয়ে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। জনগণের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা সরেজমিনে প্রতিবেদন আকারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করা হয়। সে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটের দুরবস্থার কারণ ও প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্য সবাইকেই অবগত করা হয়। তৎক্ষণাৎ সবাই আশা-ভরসা দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও দিন কয়েক পরেই তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। প্রকৃতপ্রস্তাবে, রাস্তাঘাটের দুরবস্থার চিত্রটি যেমন সত্য, তেমনি বাস্তবসত্য হল এর পেছনে নিহিত নানাবিধ অবকাঠামোগত কারণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতা।
আঞ্চলিক এই জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার জলাবদ্ধতা দূর করতে দ্রুত ড্রেনের ব্যবস্থা করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন চলাচলকারী বাসিন্দা, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ।
Discussion about this post