দেশে মাছধরার পরিমান বাড়ছে। ধরাধরি বিষয়ক আইন-প্রয়োগ বাড়ছে এবং এইখাতে সরকারি বাজেট বাড়ছে। মাছের দাম বাড়ছে এবং মৎস্যব্যবসা মালিকদের লাভ বাড়ছে। কিন্তু যারা “ধরা”র কাজটা করেন— মাছধরা, সেই জেলেরা গরিবই থাকছেন। তাহলে কি বলা যাবে যে, দেশে মৎস্যখাতের “উন্নয়ন” ঘটছে?
উন্নয়ন কি হচ্ছে? আমার অভিজ্ঞতা হলো, ফিশারিখাতে দ্রুত অবনতি ঘটছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মপরিকল্পনা দরকার।
আগের চেয়ে বেশি মাছধরা হচ্ছে, এই অবস্থাকে যদি ফিশারিতে উন্নয়নের নির্দেশক হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়, তবে বলতে হয় যে বড় ভুল হচ্ছে।
মাছ এই কারণেই ধরা হয় যে, জেলেরা তাদের পরিবার-পরিজনসহ খাবে এবং বেচবে, বেচাবিক্রির টাকায় তাদের সংসার স্বচ্ছল থাকবে এবং জেলেদের উছিলায় দেশের বাদবাকি মানুষ যারা মাছ খান তারাও মাছ কিনে খেতে পারবেন।
কাজেই, সাধারণভাবে মাছধরা খাতে ‘উন্নয়নের’ সবচেয়ে বড় নির্দেশক হলো, জেলেদের অর্থনৈতিক অবস্থা। জেলেদের অর্থনৈতিক অবস্থা যদি খারাপ হয়, তবে তো ফিশারিখাতের অবস্থা আসলেই খারাপ। বাংলাদেশে এই অবস্থা ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।
এই অবনতির অনেকগুলো দিক আছে। শুধু একটা দিকের কথা বলি। যেমন, সাগরের ফিশারি। কোটি টাকা যোগাড় করতে পারলেই একজন মৎস্য ব্যবসায়ী সাগরে মাছধরার বোট নামাতে পারেন, এমন হাজার হাজার কমার্শিয়াল বোট আছে। এইসব কমার্শিয়াল বোটে টনকে টন মাছ ধরা হয়, মাছ ধরতে ধরতে মাছের বংশ ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে আর কতবছর মাছধরা যাবে কে জানে!
কিন্তু এইসব কমার্শিয়াল বোটের জেলেদের নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। আইনত এইসব বোটে জেলেদের যেইমতো নিয়োগ, বেতন-ভাতা, সুবিধাদি এবং অবসরভাতা ইত্যাদি পাওয়ার কথা, তার কিছুই দেয়া হয় না।
তাহলে ঘটনা কী ঘটছে? একদিকে সাগর সাফ করে মাছ তুলে ফেলা হচ্ছে, অন্যদিকে সেই মাছধরা থেকে লাখ লাখ জেলে শ্রমিকের মিনিমাম আর্থিক সুবিধা মিলছে না।
এইরকম ফিশিং বোটের সংখ্যা বাড়ছে। ফিশারি খাতের এই ক্রম অবনতি ঠেকানোর কর্মপরিকল্পনা দূরের কথা, চিন্তাটাও কি আছে আমাদের?
Discussion about this post