সরকার সমর্থক এক ব্যক্তির একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। তাতে জানানো হয়েছে, এই কদিনের হরতাল-অবরোধে কত টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে নানা পরিসংখ্যান হাজির করা হয়েছে।
স্টেটাসটি সত্যিই তার কিনা জানিনা। তবে এই স্টেটাসটার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, ক্ষতির পরিসংখ্যানটা এই মূহূর্তে জাতির সামনে তুলে ধরা সরকারি দলের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। সরকার হরতাল-অবরোধে ক্ষতির ভয় দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, হরতাল-অবরোধে দেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা বরং এগুলো শাসকদের লুটপাটে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বিজয় লাভ করলে সেটি অর্থনৈতিক সংকট থকে মুক্তির পথ খুলে দেবে।
অনেকেই জানেন, এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি রাষ্ট্রের স্ট্রাকচারে শাসকদের লুটপাটের টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জনগণও সেটা বোঝে। তারা যখন জানবে, তাদের কর্মসূচিতে সরকার চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছে তখন তারা আরো উৎসাহিত হবে। কর্মসূচিতে মনযোগী হবে। আর সে কারণেই সম্ভবত কোনো পিকেটিং ছাড়াই হরতাল-অবরোধ নজিরবিহীনভাবে সফল হচ্ছে। এটা এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের পরোক্ষ প্রতিবাদ।
আওয়ামী লীগ খুব সফলভাবে জনগণের সামনে আন্দোলনের একটা ফরম্যাট দাঁড় করিয়েছে। সেটা হলো- হরতাল, অবরোধ, প্রতিবাদ মানেই লগি-বৈঠার তাণ্ডব, গাড়িতে জ্বলন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, যতভাবে পারা যায় সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন করা। সেই ফরম্যাটে আন্দোলন না হলেই তারা এবং তাদের পছন্দের ব্যক্তিরা বলা শুরু করে যে, এসব কোনো আন্দোলনই না। এভাবে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা যায় না। তাদের মতে, সব আন্দোলন তাদের মতো করেই হতে হবে, না হলে সেটা কোন আন্দোলনই না। সেই ফরম্যাটে সহিংসতা করে সরকারকে ফেলে দিতে হবে। একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে সরকার বদলাতে হবে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, তারা বিরোধীদলে ছিল এবং সরকার পরিবর্তনের সময় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়নি, এমন নজির নেই।
চলমান হরতাল-অবরোধের স্বার্থকতা হলো-
প্রথমত, এই সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ট জনগণ এর মাধ্যমে নিরবে প্রতিবাদের একটা সুযোগ পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ফুলে ফেঁপে বর্তমান অর্থনীতির আকার আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বড়। সে কারণে হরতাল-অবরোধে ক্ষতি হয় বহুগুণ বেশি। এমনিতেই সরকারের অপশাসনে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরে নেমে অর্ধেকের নিচে চলে এসেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় জিনিশপত্র আমদানির জন্য কোনো ডলারই থাকবে না। তার ওপর যদি এই অবরোধ চলতে থাকে তাহলে অর্থনীতি আরও আগেই কলাপ্স করবে। সরকার তখন শত চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। সে কারণে দাবি আদায় করতে বিরোধী দলগুলোকে চলমান অবরোধ চালিয়ে যেতে হবে এবং এর মাধ্যমে সরকারকে নমনীয় হতে বাধ্য করতে হবে। জনগণের এই নিরব প্রতিবাদেই এই কর্তৃত্ববাদী শাসকের পতন নিশ্চিত হবে।
সভ্য সমাজে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এভাবেই হয়। বিরোধী দলগুলো সঠিক পথেই আছে এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের চমৎকার ভবিষ্যৎ আছে। শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলতে থাকলে বিরোধী দলগুলোর সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
Discussion about this post