“I’m Raimondo, this time I endorse Huawei.”
এটা লিখে চাইনিজ মোবাইল ফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে তাদের নতুন মোবাইল ফোন রিলিজ করেছে। জিনা এম. রাইমন্ডো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব, যিনি ওই রিলিজের সময় চীন সফরে ছিলেন। চীন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক আলোচনার জন্য এই সফর। বিশ্ববাণিজ্যের বর্তমান মন্দা ভাব কাটাতেই, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্য সচিবকে চীনে পাঠিয়েছে।
২০২০ সালে বিশ্বের মোবাইল ফোন মার্কেট চাইনিজ ফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের দখলে ছিল। আইফোন ও স্যামসংকে টেক্কা দিয়ে হুয়াওয়ের ওপরে চলে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারে নাই, তারা হুয়াওয়েকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বাণিজ্যিক ব্লক লিষ্টে ফেলে দেয়। বলে দেয়, আমেরিকার কোনো কোম্পানি হুয়াওয়ের কাছে কোনো ধরনের সার্ভিস ও প্রোডাকট বিক্রি করতে পারবে না। হুয়াওয়ে সেবা দিতো অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রোয়েডের মাধ্যমে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়েকে অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রোয়েড ও গুগলের সার্ভিস প্লে ষ্টোর, জি-মেইল, গুগল সার্চ, গুগল ম্যাপ, ইউটিউব-এর মতো জনপ্রিয় সার্ভিসগুলো দেবে না, বলে ঘোষনা দেয় গুগল। হুয়াওয়ের মোবাইল ফোন মার্কেট রাতারাতি ড্রপ করে, কারণ বর্তমান বিশ্বের মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের যুগে গুগলের সার্ভিসগুলোর বিকল্প নেই। হুয়াওয়ে অতি দ্রুত ড্রপ করে এবং বিশ্বে তাদের প্রভাব হারিয়ে ফেলে। আবার আইফোন ও স্যামস্যাং ১ ও ২ নাম্বার মোবাইল কোম্পানিতে পরিণত হয়।
তারপর হুয়াওয়ে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম HarmonyOS নিয়ে আসে। এই অপারেটিং সিস্টেমকে মাল্টিইউজ-ওএস এ ব্যবহার করার পরিকল্পনা হাতে নেয় হুওয়াওয়ে। এটিকে ফোন, লাপটপ, বিদ্যুতিক গাড়ি, ওয়াচ ও স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসের উপযোগী করতে তারা কাজ করে। আস্তে আস্তে তারা তাদের আপগ্রেটেড ভার্সন নিয়ে আসে। আগস্ট মাসের শুরু দিকে হুওয়াওয়ে তাদের HarmonyOS 4.0 নিয়ে আসে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, চীনে তাদের অপারেটিং সিস্টেমে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডিভাইসে এক্টিভ করা হয়। ভবিষ্যতে এটি আইফোনের অপারেটিং সিস্টেমকে চালেজ্ঞ করতে পারে বলে মনে করেন, অনেক প্রযুক্তি বিশ্লেষক।
অ্যাপল বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ব্যান্ড, অ্যাপলকে কিভাবে চালেঞ্জ করবে হুয়াওয়ে? অনেকের মনে হয়তো এই প্রশ্নটা আসতে পারে। অ্যাপল তাদের আইফোনের প্রায় ৮৫% প্রোডাক্ট চীনের লোকাল মার্কেট থেকে সংগ্রহ করে। আর আইফোনের প্রায় ৯০% ম্যানুফ্যাকচারিং হয় চীনে। চীনের দক্ষ জনগোষ্ঠী ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে সেখানে আইফোন তৈরির খরচ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ ও নর্থ-আমেরিকার চেয়ে অনেক কম। তাইয়ানের একটি কোম্পানী ৮০% এর বেশি আইফোন এসেমবেল করে, তাদের চীনা কারখানায়। সেখানে প্রায় ২০০০০০ কর্মী দৈনিক ৫০,০০০ আইফোন তৈরি করতে পারে, যা আমেরিকাতে কখনও সম্ভব নয়।
একটি মজার গল্প আছে।
২০০৭ সালে, স্টিভ জবস আইফোন লঞ্চের কয়েক সপ্তাহ আগে আইফোনের জন্য একটি গ্লাস স্ক্রিন রাখার সিদ্ধান্ত নেন। বেশিরভাগ, আমেরিকান কোম্পানি বলে দেয়, এটা করা সম্ভব না, কিন্তু চীনের একটি ফ্যাক্টরি গ্লাসটি বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তারপর তারা প্রচুর গবেষণা করে, গ্লাসটি বানাতে সফল হয় এবং ৮ হাজার শ্রমিককে ১২ ঘণ্টার শিফটে কাজ করিয়ে, দৈনিক ১০,০০০ হাজার আইফোন মানুফাকচ্যারিং করার জন্য গ্লাস তৈরি করে। আমেরিকাতে এই পরিমান শ্রমিক নিয়োগ দিতেই কয়েকমাস সময় লাগতো সেখানে চীন সেটি করেছে মাত্র কয়েক দিনে। এই জন্যই চীনের ফ্যাক্টরিতে আইফোন বেশি তৈরী করা হয়।
এখন কথা হলো, হুয়ােওয়ে কিভাবে আইফোনকে চালেজ্ঞ করবে? তারা তো গুগল সার্ভিস দিতে পারবে না, গুগল ছাড়া মানুষ মোবাইল কিনবে না। কথা সঠিক। কিন্তু হুয়াওয়ে যদি চীনে অ্যাপলের বাজার দখল করে নিতে পারে, সেটিও অ্যাপলের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হবে। কারণ আইফোনের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা নয়, চীন। চীন শুধু উৎপাদনই করে না, তারা কনজিউমও করে সবচেয়ে বেশি আর চীনে গুগলের বিকল্প সবকিছুই আছে। সার্চ-ইঞ্জিন আছে বাইদু, বাইদু-ম্যাপ, ইউটিউবের বিকল্পও আছে। তারমানে চীনে যারা হুয়াওয়ে ব্যবহার করবেন, তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবেন না। গ্লোবাল শিপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনে ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অ্যাপল তাদের মোট মোবাইলের প্রায় ২৪% বিক্রি করে, যেখানে আমেরিকাতে ব্রিক্রি হয় ২১%।
হুয়াওয়ের টিকে থাকতে ২৪% চীনা বাজারই যথেষ্ট, যা তাদের পরে আরো শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে।
Discussion about this post