ছোট জেলা হলেও পঞ্চগড় বিপুল সম্ভাবনাময়। এ জেলায় দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুব একটা হয়নি। একদিক থেকে এটাও একটা সুবিধাজনক অবস্থা, কেননা অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশিরভাগ সময় স্থানীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করা হয়।
কিন্তু পঞ্চগড় ঘিরে মহাপরিকল্পনা দরকার। পঞ্চগড় যেহেতু বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান-এই চারটি দেশের মিলনকেন্দ্র তাই এই জেলা বিশেষ করে তেঁতুলিয়াক ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। নগরবিদদের পরামর্শ ও জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সৃজনশীল ও দক্ষ পরিচালক ছাড়া এটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।
জেলাটির সাথে ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িয়ে আছে চা বাগান। কিন্তু এর প্রাপ্য মূল্য হতে অসংগঠিত চাষীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। তাছাড়া চা পাতা সকলে চাষ করলে পেট ভরবে কেমন করে? অর্থাৎ কৃষিতে ভারসাম্য আনতে হবে। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে লাভবান হয়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরকে আধুনিক করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে, তবেই দক্ষ পেশাজীবীরা এ জেলায় থাকার আনন্দ লাভ করতে পারবে। সেজন্য ভালো মানের স্কুল, কলেজ এবং ভোকেশনাল শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে। যাতে উচ্চ বেতনের অফিসারদের সন্তানরাও এখানে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারে। শহরটিতে বিপি আর গার্লস স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে বিকল্প স্কুল কলেজ নেই বললেই চলে। কলেজের শিক্ষা নিয়েও কেউ কেউ হতাশ। এখানে ভাল বিকল্প তৈরি করা দরকার। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নজর দিতে হবে।
ঢালাওভাবে একই পদ্ধতিতে পড়ালেখা কাম্য নয়। এতে করে বেকারত্ব বেড়ে যায়। ঘুষের দর বেড়ে যায়। কিন্তু ঘুষের টাকাটা আগে থেকে ক্রমে ক্রমে খরচ করলেও আপনার সন্তান বেকার থাকবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
করতোয়া নদীতে প্রমোদতরী ভাসিয়ে বিনোদনকেন্দ্র করতে হবে। জহির উদ্দীন ও নজরুল পাঠাগারের আওতা বাড়াতে হবে। স্টাডিগ্রুপ করে পড়াশোনা করার আয়োজন থাকতে হবে। নজরুল পাঠাগারে গরমকালে বসা যায় না। সেটার সমাধান আশু প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তক সহকারে পাঠাগারটিতে বসার ব্যবস্থা ও কালচার থাকলে ভালো হবে।
শহরে বড় বড় এবং লম্বা লম্বা বৃক্ষ চাই। সমভাবাপন্ন সহনশীল পরিবেশের জন্য। বজ্রপাত ঠেকাতে উঁচু গাছ বিভিন্ন জায়গা নির্বাচন করে লাগিয়ে শহরটিকে নিরাপদ করতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে। দেশি ফলমূল গ্রহণ করতে হবে।
বয়স্কদের হাঁটাচলা করার জন্য চাই নির্মল পার্ক। তুলারডাঙ্গাকে সাজাতে চাই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। দেশীয় সংস্কৃতির ছোঁয়ায় নির্মিত হবে পঞ্চগড়।
আমলারা আসবে যাবে কিন্তু শহরটির অভিভাবক হতে হবে স্থানীয়দের, যারা শহরটিকে ভালোবাসেন। সত্য অপ্রিয় হলেও বলতে হবে।
কলকারখানা কই! চিনিকলটি চালু করা প্রয়োজন।
তরুণদের মানবপ্রেম ও প্রকৃতি প্রেমের দীক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। মাদক ও অপরাজনীতি হতে দূরে রাখতে হলে মেরুদণ্ডওয়ালা শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার। মসজিদ, মন্দির, গির্জায় নিয়মিত মাদকবিরোধী বক্তব্য রাখা দরকার।
বই ধরো, মাদক ছাড়ো -করো রক্তদান প্রভৃতি শুভ আন্দোলন থাকা চাই।
তরুণদের রাজনীতিকে ভালোবাসা চাই। কেননা চাঁদা তুলে, ভিক্ষা করে সোশ্যাল ওয়ার্ক করে দেশ উন্নত করা যায় না। রাজনীতিবিদরাই আসলে দেশটা চালায়। ক্ষমতা ছাড়া কিছুই পরিবর্তন করা যায় না। আই হেট পলিটিক্স করে কিছুতেই সফল হতে পারবেন না। রাজনীতিতে আসুন। গণতন্ত্র চর্চার বিকল্প নেই। ভালো কাজে প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। যোগ্যতমরাই টিকে যাবে। নিজেকে যোগ্য করুন। সমাজে একা একা সহি থাকতেও পারবেন না। মেডিকেল কলেজ হলে আমাদের দাদা-দাদি মা-বাবা বাসায় থেকেই চিকিৎসা পেতে পারতো। গরীবরাও চিকিৎসা পেতে পারতো। এবং অপচিকিৎসা থেকেও নিরাপদ থাকতে পারতো।
সড়ক দুর্ঘটনার কথা নাই বললাম, এটা স্রেফ মহামারী। যুদ্ধতেও এতো মানুষ মারা যায় না। প্রতিদিন পরিচিত ও প্রিয় মানুষের থেঁতলানো নিথর দেহ সহ্য করা যাচ্ছে না। টাকা হলেই বাইক কিনে সন্তানদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবেন না। ট্রাফিক সিস্টেম আরো উন্নত করতে হবে। গাড়ির গতি, চালানোর রীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ইদানীং হর্নের জ্বালায় কান পাতা যায় না। এতে মেজার তিরিক্ষি হয়ে উঠবে। শহরে এতো ধূলো কেন?
বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। কাউন্সিলিং সেন্টার কই? মনোচিকিৎসা কই! ফিজিওথেরাপি কই! পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। পারিবারিক কলহ ব্যক্তি মানুষকে এগিয়ে যেতে দেয় না। মেলামেশা বাড়ান। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের খোঁজ নিন। ধর্মীয় নেতাদের আন্তবৈঠক পারস্পারিক বিষবাষ্প দূর করতে পারে। অবশ্য দলাদলি ও ব্যক্তিস্বার্থ আমাদের বিভক্তি বাড়িয়ে রেখেছে।
আবার বলছি তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে এলে নষ্ট অনেক কিছুই ভেসে যাবে করতোয়ায়।
বৃষ্টির পর স্নিগ্ধ বাতাসে একদিন শ্বাস নেব বুক ভরে পঞ্চগড়ে… একসাথে সকলে।
Discussion about this post