স্নেহাস্পদ হৃদকমল,
আশা করি কুশলেই রহিয়াছ। আমিও বিধাতার অশেষ কৃপায় এক প্রকার আছি। পর সমাচার এই, শুনিতে পাইলাম তুমি দৈনিক আশার আলোর সাহিত্য সম্পাদক হইয়াছ- এ কথা শুনিয়া আমি যারপরনাই আশান্বিত হইয়াছি।
যেহেতু তুমি সাহিত্য সম্পাদক হইয়াছ সুতরাং নিজের শিক্ষকের লেখা অনায়াসেই ছাপিবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করিয়া একখানি কবিতা পাঠাইলাম।
ভালো থাকিও।ইতি-
তোমার এমআইএম স্যার।
তাং ৩০/১০/২০২৩
পুনশ্চ: আজ একখানি কবিতা পাঠাইলাম। পরে আরো পাঠাইব।
ঘনতমসা
মোমিনুল ইসলাম মধু (এমআই স্যার)
একি! চারিদিকে ধোঁয়া ঘনতমসা অন্ধকার,
উঠানজুড়ে এলোমেলো ফণিমনসা রুদ্ধদ্বার!
ওগো ললিতা! কীভাবে পৌঁছাবো অন্দরমহলে,
এ রাতের প্রেম কী তবে যাবে সব রসাতলে?
ওহ! না না, এ আমি মানিনে মানিনে মানিনে,
ভেতরে নাও ত্বরা, কীভাবে নেবে তা জানিনে।
জ্বলিছে নক্ষত্র ডাকিছে ঝিঁঝিঁপোকা ঝিংঝিংঝিং,
নিভু প্রদীপের মতো হৃদয় কাঁপিছে পিংপিংপিং!
আর একটু হলেই হয়তো ধুলিস্মাৎ হবে দেহ,
কে আছ ওগো! হাতখানি কি ধরার আছ কেহ?
হৃদকমল হাসান ফিরতি মেইলে তার শিক্ষককে আশ্বস্ত করল, লেখা ছাপা হবে।
কিন্তু সেই লেখা ছাপাতে গিয়ে সম্পাদক হৃদকমল হাসানকে কী নিদারুণ হ্যাপার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা নিয়েই এই গল্প।
কিছুদিন আগে সাহিত্য সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ কোরাঈশি আশার আলো ছেড়ে নৈরাশ্যের আলো নামের একটি আপকামিং পত্রিকায় ফিচার এডিটর পদে জয়েন করেছেন। তিনি পদত্যাগ করার পর দৈনিক আশার আলো কর্তৃপক্ষ নতুন কাউকে নিয়োগ না দিয়ে জুনিয়র সাব-এডিটর ও কোরাঈশি সাহেবের সহকারি হৃদকমল হাসানকেই দায়িত্ব দিয়েছে। অর্থাৎ আশোর আলোর উপসম্পাদক হারিস মাতুব্বর পাতার দায়িত্ব নিজের হাতে রেখে হৃদকমল হাসানকে কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বসিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, কিছুটা হৃদকমল হাসানের উত্তেজনায় আর কিছুটা বন্ধুদের ইন্ধনে বাজারে রটে গেছে যে, হৃদকমল হাসানই আশার আলোর সাহিত্য সম্পাদক হয়েছে। কিন্তু ঘটনা যে মোটেও সেরকম নয় তার প্রমাণ এমআইএম স্যারের কবিতাখানি।
সাহিত্য পাতায় এমনিতেই লেখা আসে কিংবা হারিস মাতুব্বর হৃদকমলকে দিয়ে বিভিন্ন সাহিত্যিককে তাগিদ দিয়ে লেখা আনান। এভাবেই সপ্তাহের পাতা ভরে যায়। অর্থাৎ হারিস মাতুব্বর যা বলেন, হৃদকমল হাসানকে তা-ই করতে হয়।
কিন্তু এমআইএম স্যারের কবিতাটা ছাপানো দরকার। কেননা তিনি একে তো হৃদকমলের শিক্ষক দ্বিতীয়ত এই কবিতার সাথে তার প্রেস্টিজ জড়িত। তাই মুড বুঝে একদিন ফুরফুরে মনে হারিস মাতুব্বরের রুমে হাজির হলো হৃদকমল। বলল, ‘ভাই একটা কবিতা আসছে। এই যে দেখেন।’
হারিস মাতুব্বর একবার হৃদকমলের দিকে আর একবার কবিতার দিকে তাকালেন। যেন তিনি বুঝে নিলেন এই কবিতার কবির সাথে হৃদকমলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তারপর কপাল থেকে চশমাটা চোখে নামিয়ে কবিতাটায় চোখ বোলালেন। মুহূর্তে তাঁর ঠোঁট, কপাল এবং ভ্রু এমনভাবে কুঁচকে উঠল, তেঁতুল বা কামরাঙা জাতীয় খাবার খেলে আমাদের এ রকম দশা হয়।
হারিস মাতুব্বর গাল চুলকাতে চুলকাতে বললেন, ‘এইসব মধ্যযুগীয়মার্কা কবিতা তুমি কই পাও কমল? তুমি একটি শীর্ষ দৈনিকের সাহিত্য পাতায় কাজ করো। তোমাকে আরো আধুনিক হতে হবে। আরো ইনোভেটিভ হতে হবে। না হলে তো এখানে টিকতে পারবা না।’
‘ঠিক আছে ভাই।’
‘কিন্তু এই কবিটা কে? কোত্থেকে আবিস্কার করেছ একে?’
‘আর বলবেন না ভাই। আমার শিক্ষক। মানে কলেজ শিক্ষক।’
‘এদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবা।’
‘জি ভাই।’
‘১০০ হাত দূরে থাকবা।’
‘অবশ্যই ভাই।’
‘মালিক আমাদের হাতে পত্রিকা ছেড়ে দিছে মানে সারাজীবনের জন্যে ছেড়ে দেয় নাই। প্রতিনিয়ত মনিটরিং করতেছে। একটু এদিক-সেদিক হলে তুমি-আমি কেউ এখানে থাকতে পারব না। হাসি মুখে চলে যেতে হবে।’
‘জি ভাই বুঝতে পারছি।’
‘যাও। কাজ করো।’
হৃদকমল বুঝে গেল নিজের পত্রিকায় এমআইএম স্যারের কবিতা ছাপানো যাবে না।
কিন্তু এই কথা সে স্যারকে কীভাবে বোঝাবে?
ব্যাপারটা হৃদকমলকে বিমর্ষ করে ফেলল।
অবশেষে একটা বুদ্ধি এল হৃদকমলের মাথায়।
পরদিনই সে চলে গেল আপকামিং নৈরাশ্যের আলো পত্রিকার অফিসে অর্থাৎ কোরাঈশি ভাইয়ের কাছে।
সব শুনে কোরাঈশি ভাই বললেন, The head of the dog is better than the tail of the lion. বুঝলা কিছু?’
‘জি ভাই।’
‘যদি বুঝে থাকো তাহলে দৈনিক আশা থেকে দৈনিক নৈরাশ্যে চলে আসো। শিশুতোষ পাতার দায়িত্ব নাও। ওটা এখনো খালি আছে।’
‘আপনি বলতেছেন?’
‘এখানে তোমার সম্ভাবনা বেশি। বেতনও বেশি পাবা।’
‘ওকে ফাইনাল। কিন্তু আমার স্যারের কবিতাটার কী হবে?’
‘ওটা আমি দেখব।’
‘তাহলে কবে থেকে জয়েন করবো ভাই?’
‘এখন থেকেই। ডেস্কে যাও। কিছু কনটেন্ট দিচ্ছি। পাতায় বসাতে শুরু করো।’
*
দৈনিক নৈরাশ্যের আলো পত্রিকায় এমআইএম স্যারের কবিতা ছাপা হওয়ার পর, লিংক সংযুক্ত করে হৃদকমল ইমেইল বার্তায় লিখলো-
শ্রদ্ধাস্পদেষু স্যার,
সালাম জানবেন। আশা করি ভালো আছেন।
আমি দৈনিক আশার আলো ছেড়ে দৈনিক নৈরাশ্যের আলো পত্রিকায় জয়েন করেছি। কবিতা ছাপাতে দেরি হওয়ার এটাই কারণ।
মার্জনা করবেন স্যার।
ইতি আপনার স্নেহের হৃদকমল
Discussion about this post