অবিনাশ বাবু হঠাৎ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তার বিছানায় একটা ডিম।
তিনি তাড়াহুড়া করে স্ত্রীকে জাগালেন।
বললেন, বিছানায় ডিম কোথা থেকে এলো?
স্ত্রী বললেন, বিছানায় ডিম আসবে কোথা থেকে? এত দামি জিনিস আমি বিছানায় রাখবো কেন, ভেঙে যাবে না?
অবিনাশ বাবু ভাবতে শুরু করলেন। বিছানায় ডিম আসার কোনো উপায় নেই। পুরো এলাকায় কোনো মুরগি নেই। মুরগি থাকলেও বাসায় ঢোকার উপায় নেই। বিছানায় উঠে ডিম পেড়ে যাবে সে তো অলীক কল্পনা।
স্ত্রী অবিনাশ বাবুর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করলেন। অবিনাশ বাবুও স্ত্রীর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন।
দুজনেই ভাবছিলেন ডিমটা হয়তো অন্যজন পেড়েছে।
কিন্তু এরকম একটা ভূতুড়ে ব্যাপার নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারছিলেন না।
স্ত্রী সন্দেহজনক ডিমটা তুলে যত্ন করে একটা জায়গায় আলাদা করে রেখে দিলেন।
পরদিন অবিনাশ বাবু ঘুম থেকে উঠে দেখলেন বিছানায় আরেকটা ডিম।
ভাবছিলেন, ডিমটা লুকিয়ে ব্যাপারটা চেপে যাবেন। কিন্তু তখনই স্ত্রীর ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেই ফ্যালফ্যাল করে ডিমটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
স্ত্রী নীরবতা ভেঙে বললেন, ডিম কিন্তু তুমিই পাড়ছো অবিনাশ।
অবিনাশ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে শুধু বললেন, আমি পুরুষ। যুক্তি দিলে ডিম কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তোমারই পাড়ার কথা।
স্ত্রী আবার ডিমটাকে আলাদা করে যত্ন করে তুলে রাখলেন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় স্ত্রী বললেন, আজ আমরা আলাদা আলাদা শোবো।
কোনো কথা না বলে অবিনাশ আলাদা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
পরদিন সকালবেলা উঠে অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলেন তার বিছানায় একটা ডিম। এবং মশারির বাইরে তার স্ত্রী কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
হাতেনাতে ধরা পড়ে অবিনাশ মর্মাহত হলেন। সারাদিন খুব বিষণ্ণতায় কেটে গেল তার।
স্ত্রী ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক করতে চাইলেও তিনি স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না। যত্ন করে আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখা তিনটা ডিমের দিকে তাকিয়ে তিনি বিস্মিত হচ্ছিলেন। একেবারে মুরগির ডিমের মতো ডিম প্রতিদিন রাতে কীভাবে তিনি একটা করে পাড়ছেন ভেবে অবিনাশ বিমর্ষ হয়ে গেলেন।
চতুর্থ রাতে, আবার স্বামী-স্ত্রী একসাথে এক বিছানায় শুয়ে পড়লেন।
সকালে উঠে যথারীতি আবার একটি ডিম পাওয়া গেল।
অবিনাশের আচরণ বদলে যেতে শুরু করলো।
তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিলেন। স্ত্রী তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন।
বিষয়টাকে হালকা করার জন্য বললেন, চার রাতে তো ৬০ টাকার ডিম পেড়ে ফেললে। তোমার ডিমগুলো সদ্ব্যবহার করবো নাকি?
অবিনাশ কোন কথা বললেন না।
আরো চুপচাপ হয়ে গেলেন।
বিকেলে অবিনাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে স্ত্রী ডিমগুলোর দিকে তাকালেন। দেখতে একদম দেশি মুরগির ডিমের মতো। এগুলো অবিনাশ কিভাবে পাড়লো! কোন যুক্তিতে একজন পুরুষ মানুষ প্রতি রাতে একটা করে ডিম পাড়তে পারে?
স্বামী স্ত্রী দুজনেরই হ্যালুসিনেশন জাতীয় কিছু হয়েছে কিনা বোঝার জন্য তিনি গায়ে চিমটি কেটে ডিমগুলো স্পর্শ করলেন। দেখলেন সব ঠিক আছে।
অবিনাশ বিকেলে বের হয়ে সোজা ডাক্তারের কাছে গেলেন।
বললেন ডাক্তার বাবু, বড় বিপদ হয়েছে।
ডাক্তার বললেন, আবার কী বিপদ হলো? প্রেসারের জন্য নতুন যে ওষুধগুলো দিয়েছিলাম সেগুলো ঠিকঠাক খাচ্ছেন তো।
খাচ্ছি, কিন্তু একটা বিপদ হয়েছে।
কী বিপদ?
অবিনাশ বাবু আমতা আমতা করতে শুরু করলেন। বললেন আপনাকে যে কীভাবে বলি ডাক্তারবাবু? বিষয়টা খুব লজ্জার। স্ত্রীর কাছে আমি ছোট হয়ে গেছি।
ডাক্তার বাবু বললেন, চিন্তা করবেন না এটার জন্য ভালো ওষুধ আছে।
অবিনাশ বাবু তার দিকে তাকালেন, বললেন, ওরকম কিছু নয়।
ডাক্তার বললেন, তাহলে?
অনেক সময় চুপ থাকার পর অবিনাশ বাবু বললেন, আসলে হয়েছে কি ডাক্তার বাবু। আমি প্রতিদিন একটা করে ডিম পাড়ছি।
ডাক্তার বললেন, কী বলেন এ তো অসম্ভব।
অবিনাশ বাবু বললেন, কীভাবে পাড়ছি তা আমি নিজেও জানিনা। ঘুমের মধ্যেই ঘটনাটা ঘটছে। এর মধ্যে এক হালি ডিম পেড়ে ফেললাম।
ডাক্তার কোনো সমাধান দিতে পারলেন না দেখে অবিনাশ বাবু বাসায় ফিরলেন।
মনটা তার খুব ভার। খাওয়া-দাওয়ায় মনোযোগ নেই। দেখতে দেখতে স্ত্রী বললেন, দুর্মূল্যের বাজারে এটা খারাপ কিছু নয়। বরং আমি বলব প্রতিদিন একটা করে ডিম দিচ্ছো এটা ভালো ব্যাপার। ডাক্তারকে শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করো, এই ডিম খাওয়া যাবে কিনা।
রাত এগারোটার দিকে স্বামী স্ত্রী মিলে ঘুমাতে যাবেন এমন সময় বাসার ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো।
অবিনাশ ফোন ধরতেই ডাক্তারবাবু বলে উঠলেন, আপনি একদম টেনশন করবেন না মশাই। আপনাকে এখন এভাবে বলছি বটে কিন্তু আমি নিজেই খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। আপনার কী হাল হয়েছে তা তো বুঝতেই পারছি। বৌদির সামনে মুখ দেখাতে পারার কথা নয়। কিন্তু আপনার জন্য সুখবর আছে। আপনাকে নতুন যে ওষুধটা দিয়েছিলাম সেটা ঠিক কবে শুরু করেছেন বলেন তো?
অবিনাশ বাবু হিসাব করে বললেন আজ নিয়ে পাঁচ দিন হবে।
ডাক্তার বললেন, তার মানে আগামীকাল সকালেও আপনি একটা ডিম পাড়বেন। তবে পরের দিন থেকে আর ডিম পাড়তে হবে না। ওষুধটা বন্ধ করে দিন।
অবিনাশ বাবু বললেন, মানে কী?
ডাক্তারবাবু বললেন, আপনি যাবার পর থেকে আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এত বছরের ডাক্তারি জীবনে এমন কথা তো শুনিনি। ভাবতে ভাবতে নতুন ওষুধটার কথা মনে পড়লো। ওষুধ কোম্পানিতে ফোন দিয়ে ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। আপনার ঘটনাও তাদেরকে জানালাম। তারা বললেন, এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। তাদের ওষুধ খেয়ে দিল্লিতে একজন ডিম পাড়তে শুরু করেছিল। আপনি ডিম পাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি। বলতে পারেন, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় এমন হচ্ছে। কাল থেকে আর এই ওষুধ খেতে হবে না।
বিকেলে এসে নতুন ওষুধ লিখিয়ে নিয়ে যাবেন।
(কলকাতার একটা পত্রিকায় গল্পটি পড়েছিলাম। লেখকের নাম, পত্রিকার নাম, গল্পের নাম সব ভুলে গেছি। গল্পটাও পুরো মনে নেই।)
Discussion about this post