রাষ্ট্র কী বা তার পরিচয় কী সে আলোচনায় না গিয়ে বরং রাষ্ট্র কী চায় সে আলোচনাই এখানে মুখ্য। আমরা যাকে বাংলায় রাষ্ট্র বলি- ইংরেজিতে তাকে স্টেট বলে। আর এই স্টেট শব্দটির উৎস হলো, ল্যাটিন শব্দ স্ট্যাটাস বা অবস্থা। অর্থাৎ আজ আমাদের দেশের যে অবস্থা, তাই হলো এই স্টেট। আর এই স্টেটের শাসক যেই হোক না কেন, তারা যা চায়- তার মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই। বরং তারা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বা দলে বিভক্ত হয়ে একই স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতা আরোহন করতে চায়। আর ক্ষমতার রূপটিই হলো মূলত রাষ্ট্র। ক্ষমতাসীনরা সর্বদা ভীতি ছড়াতে ও শক্তিমান কিন্তু তার বিপরীত পক্ষকে পর্যুদস্ত করে নুইয়ে দিতে চান। তারা চান, গোলাপের সৌরভ কেবল তাদেরই হোক। গোলাপ সৌরভ ছড়ালে যে ঘ্রাণ আমাদের কাছে পৌঁছায় তা কেবল তাদের বদান্যতা ও কৃপায়। তারা চাইলে এই গোলাপের গাছ শিকড়সহ উপড়ে ফেলতে পারতো কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ তারা দয়ালু, কৃপাময় ও পরোপকারী এবং বড় মনের উদার মানুষ। আমরা যে সৌরভ পাচ্ছি এজন্য তাদের গুণগান গাওয়ার পাশাপাশি স্বয়ং গোলাপেরই উচিত তাদের কাছে অধিক কাল বেঁচে থাকার প্রার্থনা করা। এখন রাষ্ট্র এমন গোলাপের চারা রোপন করছে, যেখান থেকে কোনো সৌরভ ছড়াবার সম্ভাবনা নেই। এই গোলাপের পেছনে অর্থ ব্যয় কোনো ইনভেস্টমেন্ট নয় বরং অপচয়। আর এমন অপচয় রাষ্ট্র বারবার করতে প্রস্তুত। যে তাকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে পারে কিংবা তার নড়বড়ে ভিতকে সমূলে উৎপাটিত করে দিতে পারে, এমন বৃক্ষের চাষাবাদ তারা কেন করবে? কখনো এমন বৃক্ষ রোপন করা উচিত নয়! বরং এই ধরায় বৃক্ষ যদি তার সত্তাকে ভুলে গিয়ে অন্যের মতো হয়ে বাঁচতে চাওয়ার আবেদনকে মেনে নেয়, তবেই তার চাষাবাদ উর্বর হবে। আর তাইতো এখন সব দেশেই চলছে এমন তারুণ্যের উর্বর চাষাবাদ। যে সকালের রোদ ঘরে প্রবেশ করতে না দিয়ে বরং কপাটকে শক্ত করে আটকে দিয়ে কম্বলমুড়িয়ে উষ্ণতা খুঁজে। অথচ তার চেয়ে আরো আরামের উষ্ণতা এই সুন্দর প্রাকৃতিক রৌদ্রময় সকাল তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সে স্বাগতম পছন্দ করবে কেন? সে পছন্দ করবে কোনো ঊর্বশী তরুণীর তাড়না। যে তাকে দুঃখ বা যন্ত্রণা দিলেও সে এই জ্বালাকে সাদরে গ্রহণ করে নেবে। যে চাওয়া তাকে বেদনা দেয়; সে এমন চাওয়া বারবার চাইবে তাতে আপত্তি নেই বরং আপত্তি যে তাকে স্বাগতম জানাবে তাকে গ্রহণ না করার। সে ঊর্বশী কোনো তরুণীকে না পাওয়ার বেদনায় আক্ষেপ করতে প্রস্তুত, কিন্তু বৃহৎ উদ্দেশ্য সাধনে ঘর থেকে বের হতে রাজি নয়। বরং আমি না গেলেও চলবে; অন্য আরো অনেকে তো আছে। তারা এসে করে ফেলবে, এমন মানসিকতায় ভরপুর আজ এই দেশ। যৌবন ধারণ করা এই তরুণরা যুদ্ধে যাওয়ার সকল সম্ভাবনাকে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সামান্য কায়িক শ্রম করতেও দিতে রাজি নন আমাদের পিতামাতারা। ফলে আমরা উৎপন্ন হয়েছি শোপিস হিসেবে- যারা দেখতে সুন্দর, পরিপুষ্ট ও নড়বড়ে। আর রাষ্ট্র সর্বদা রোপণ করে দেখতে এমন সুন্দর,পরিপুষ্ট ও ক্ষয়িষ্ণু বৃক্ষ। যে ভয় পাবে ঝড়কে এবং ঝড়ের সময় সে যেন প্রয়োজনে রাবারের মতো হেলে পড়ে নিজেকে বাঁচাতে পারে এমন কৌশল তাকে শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্র এমন বৃক্ষের চাষাবাদ করে না, যে ঝড়ের সময় সিনা টান করে দাঁড়িয়ে ঝড়কে হুংকার দিয়ে উঠতে পারে! রাষ্ট্র এখন যে তরুণের রোপণ ও চাষাবাদ করছে তাকে দিয়ে বিপ্লবের ফুল আর ফুটবে না বরং প্রেম নামক স্থূল অনুভূতি তসরুপ করে দিয়েছে তরুণদের সবকিছু!
সাদিকুর রহমান : তুলনামূলক ধর্ম ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিষয়ক গবেষক
Discussion about this post