কোনো দেশের মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতেও ওই মুদ্রার মান নির্ধারিত হয়। মুদ্রার এই মান নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন মেয়াদে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে। এর সাথে স্বপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা, ডলারের মূল্যমানের কাজও যেন আইএমএফ করে থাকে। এ কথা সত্যি, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার অনেক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের অংশ ৬৪ শতাংশের বেশি। ইউরো প্রায় ২০ শতাংশ। চীনের ইউয়ান, ইয়েন (৫.২ শতাংশ) এবং পাউন্ড স্টার্লিং (৪.৯ শতাংশ) শেয়ার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
ডলার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শক্তিকে প্রতিফলিত করে। ফলে বাণিজ্যের স্বার্থে বিশ্বের প্রায় সব দেশ বিভিন্ন সময়ে ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা সমন্বয় করতে হয়। মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে মোটা দাগে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়; রফতানি আয় বৃদ্ধি পায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
এই মুহূর্তে দেশে আবারও দেখা দিয়েছে নগদ ডলারের তীব্র সংকট। তীব্র এই সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোয় ডলার মিলছে না। ফলে নগদ ডলারের দাম আবারও বেড়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, এখন নগদে প্রতি ডলারের দাম ১১২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু রাজধানীর খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৭-১১৮ টাকার মধ্যে। হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংকে ১১০ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে।
ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে ডলার কেনার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ সময়ে অনেকে বিদেশে ভ্রমণের জন্য গেছেন। আবার শিক্ষার উদ্দেশে অনেকে বিদেশে গেছেন। তাঁদের প্রায় সবাই নগদ ডলার সঙ্গে করে নিয়েছেন। ফলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে।
ইউনেসকোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অন্তত ৪৯ হাজার ১৫১ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য বিদেশে গেছেন। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১১২ এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৬ হাজার ৬০৯। ফলে গত ১৫ বছরে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন গুণের মতো বেড়েছে।
১ আগস্ট থেকে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে দাম দিচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো এখন নগদ ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, বেসরকারি খাতের ব্যাংকে যা ১১১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। মানি চেঞ্জারগুলো ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে ১ টাকা বেশি রাখতে পারে।
তবে বাজারে ডলারের সরবরাহ নেই বলে জানান মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কর্মকর্তারা, তারা বলছেন, ‘ডলারের সরবরাহ নেই, এ জন্য বিক্রিও করতে পারছি না। কিছুদিন আগে সরবরাহ পেয়েছিলাম, তখন ১১২ টাকা দামে বিক্রি করেছি।’
এদিকে ব্যাংকগুলোয়ও ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বিক্রিও হচ্ছে কম। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশফেরত নাগরিকেরাই সাধারণত ব্যাংকে নগদ ডলার সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। যেসব ব্যাংকের খুচরা গ্রাহক বেশি, তারা কিছু ডলার পাচ্ছে। মতিঝিল এলাকার ব্যাংকে নগদ ডলারের অন্যতম জোগানদাতা ছিল জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস। তবে সেখানে এখন ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালের জুলাই-আগস্টে সংকটের সময়ে খোলাবাজারে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১২১ টাকায় উঠেছিল। এরপর ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠনকে (এবিবি) ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়। পাশাপাশি নগদ ডলারের দামও নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রার মান কমে গেলে অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়ে?
বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকলে এর দাম যেমন বেড়ে যায়, একইভাবে যখন অর্থনীতিতে ডলারের সরবরাহ বেশি হয় তখন ডলারের দাম কমে যায়। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেলে ডলারের দামও বেড়ে যায়। অর্থাৎ পণ্যের মতোই ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যের ভিত্তিতেই ডলারের দাম বাড়ে-কমে।
কোন দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন নেতিবাচক না ইতিবাচক, সেই সিদ্ধান্ত দেশ অনুযায়ী আপেক্ষিক। অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, অবমূল্যায়ন হলে রফতানি বাড়ে। আর অতিমূল্যায়ন হলে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে কী পরিমাণ এর লাভ-ক্ষতি, তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। এ বিষয়ে আইএমএফের এক গবেষণায় বলা হয়, একটি দেশের মুদ্রামানের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে দেশটির জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ রফতানি বৃদ্ধি পায়। তাত্ত্বিকভাবে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে রফতানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। কারণ ডলারের বিপরীতে আগের থেকে বেশি হারে টাকা পাওয়া যায়।
অন্য দিকে মুদ্রার অবমূল্যায়ন আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। কারণ আমদানিকারকদের আগের থেকে বাড়তি অর্থ দিয়ে ডলার কিনতে হয়। দেশের যেসব রফতানিকারক পণ্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানি করেন, তারাও পড়েন বিপাকে। কারণ কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে যায়। আবার স্বল্পমেয়াদে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে যায়।
বিশ্বে এমন কিছু পণ্য রয়েছে যা কেবল ডলারেই কিনতে হয়। যেমন- অপরিশোধিত তেলসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণ ডলারে অনুমোদিত হয়। অন্য দিকে বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশের মুদ্রার বেশির ভাগই কেবল নিজ নিজ দেশের মধ্যে ব্যবহৃত হয়, ফলে এর কোনো আন্তর্জাতিক মূল্য নেই।
আমরা প্রায়ই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলি। মনে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকলে এর দাম বেড়ে যায়। চাহিদা-সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান হয়। যখন অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ বেশি হয়, কিন্তু আমরা যা চাই তা পাই না, তখন ডলারের বিপরীতে মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।
যখন কোনো কিছুর চাহিদা বেশি থাকে, তখন এর দাম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি থাকায় ডলারের দামও বাড়ছে। যেসব দেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি, তারা রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি বাবদ বেশি খরচ করে। ডলারের দাম বেশি হলে সেসব দেশের আমদানি খরচ বাড়ে।
ডলারের দাম সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। ডলারের দাম বাড়ার আগে বা টাকার অবমূল্যায়নের আগে যে পরিমাণ উপার্জন করতেন এখনো তাই করছেন। তারা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন। কিন্তু, আসলে কী তাই?
বিষয়টি মোটেও এমন নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি মানেই নিজস্ব মুদ্রার দাম কমে যাওয়া। এটি সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। ডলারের দাম বেড়ে গেলে বেশি খরচে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়।
এটি কি শুধু ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের জন্য জ্বালানি খরচ বাড়াচ্ছে? তা নয়। তেলের দাম বাড়লে শাকসবজি, ভোজ্য তেল ও খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। ফলে, সেসব পণ্যের দামও বাড়ে। এটি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। এটি একটি দেশকে মূল্যস্ফীতির দিকে ঠেলে দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।
অপরিশোধিত তেলের জন্য অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয় বলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির সক্ষমতা কমতে থাকে। এ কারণে আমদানিনির্ভর দেশগুলোয় বিদেশি পণ্য ব্যয়বহুল হয়।
রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। যুদ্ধের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় তেলের দামও বেড়েছে।
বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা যখন স্টক ও বন্ড বাজার থেকে অর্থ তুলে নেন তখনো বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন হয় এবং ডলারের দাম বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি যুক্ত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম বেশি হলে সেসব দেশের আমদানি খরচ বাড়ে। অথচ সাধারণ মানুষ ডলারের দাম বৃদ্ধির আগে যে পরিমাণ উপার্জন করতেন এখনো তাই করছেন। ফলে মূল্যস্ফীতি হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। আমদানি পণ্যের জন্য অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়; যার ফলে দাম বেড়ে যায়।
তাই একটি নিখুঁত ভারসাম্য অর্জন করতে হবে, যাতে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এ কারণে আমদানিনির্ভর দেশগুলোয় বিদেশী পণ্য ব্যয়বহুল হয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি বা টাকার দরপতন বিদেশী শিক্ষা ও ভ্রমণকে আরো ব্যয়বহুল করে তোলে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়।
ডলারের মূল্য বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার বৈশ্বিক প্রবণতা দেখা দেয় অনেক সময়। কারণ ডলারের মূল্য হঠাৎ অনেক বেড়ে গেলে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের মূল্য এবং খোলাবাজারের ডলারের দামে বেশ পার্থক্য দেখা দেয়। ফলে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠাতে উৎসাহী হন যা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে আরো প্রভাবিত করে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ডলারসঙ্কটের প্রভাব প্রকট হচ্ছে। জ্বালানি পণ্যের বকেয়া বিল পরিশোধে এ মুহূর্তে অন্তত ১০০ কোটি ডলার দরকার। পিডিবির কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা অন্তত ১৫০ কোটি ডলার যা পরিশোধ করতে না পারায় জ্বালানি আমদানি করে চাহিদা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ডলারসঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে ব্যাহত হতে পারে এলএনজি আমদানি। ডলার দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক, কারণ বিদ্যুৎ-জ্বালানির পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য- সার, খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলার সহায়তা দিতে হচ্ছে। আবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমেছে।
জ্বালানি তেল আমদানিও সঙ্কটে – জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় কোম্পানিগুলো তেল পাঠাবে না বলেছে। প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টন পরিশোধিত এবং এক লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। গত ১১ মে পর্যন্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
ডলারসঙ্কট কেন কাটছে না? ডলারসঙ্কট কাটাতে তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল পণ্যের এলসিতে শতভাগ পর্যন্ত মার্জিন নির্ধারণ ও শুল্কহার অনেক বাড়ানো হয়েছে। ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা যাচাই করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি ১২ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে রফতানি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর পরও সঙ্কট প্রকট হওয়ার মূল কারণ, বিদেশী ঋণ ব্যাপকভাবে কমেছে। সুদসহ আগের দেনা পরিশোধের চেয়ে নতুন ঋণ আসছে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার; আইএমএফের হিসাবে নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে মুদ্রার অবমূল্যায়ন বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জেপি মর্গানের তথ্যানুযায়ী, ডলারের নমিনাল কার্যকর বিনিময় হার ২০২২-এর মধ্যে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ের মধ্যে ইয়েনের কার্যকর হার ১২ শতাংশ, পাউন্ডের ৯ এবং ইউরো ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। শুধু ডলারের বিপরীতে হিসাব করলে পাউন্ড স্টার্লিং ২১ শতাংশ, ইয়েনের ২০ এবং ইউরো ১৬ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। এই মুদ্রার অবমূল্যায়নের অন্যতম কারণ, দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়া এবং সর্বশেষে ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ।
অবমূল্যায়নের তুলনায় জীবিকা নির্বাহের ব্যয় বেশি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে আছে। বিভিন্ন মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের ওপর নির্ভরতা ও সর্বজনীন মুদ্রার অভাব এ পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে। অতীতে বেশির ভাগ দেশ সোনার মান অনুসরণ করে মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করত, কিন্তু সোনার মান নিয়ে মুদ্রার বিনিময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ক্রমেই অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে। এ কারণেই ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন ডলারকে একটি দেশের মুদ্রার মান প্রতিষ্ঠার মানদণ্ডে পরিণত করেছিল। এতে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোকে তাদের মুদ্রার মান নির্ধারণে সোনার পরিবর্তে ডলার ব্যবহার করতে সম্মত হয়। ডলারের বিপরীতে তাই একটি সর্বজনীন মুদ্রা গ্রহণের ধারণা দীর্ঘদিন আলোচনায় আছে। কিন্তু আজ অবধি তা অধরাই রয়ে গিয়েছে। একটি সর্বজনীন মুদ্রা গ্রহণ করতে পারলে বাণিজ্য আরো সহজ হয়ে উঠবে, যা ইইউ সদস্য দেশগুলো ইউরোকে তাদের সরকারি মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করার সময় ঘটেছিল।
Discussion about this post