সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের হাত ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তিনবার ধন্যবাদ দিলেন, ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ। আপনাকে ছাড়া আমরা এখানে থাকার কথা চিন্তাই করিনি।’
জি-২০ সম্মেলনে গত শনিবার জো বাইডেন ভারত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হয়ে এক নতুন বাণিজ্য পথ চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই পথ তৈরি হবে ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত। রেলপথ আর বন্দর পেরিয়ে এই পথ মধ্যপ্রাচ্য হয়ে যাবে ইউরোপ পর্যন্ত। হোয়াইট হাউজ আশা করছে এই পথ ‘যোগাযোগের নতুন যুগ’ আনবে।
এই পথে আনা-নেয়া করা হবে পণ্য ও অন্যান্য পরিষেবা। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, জর্ডান, ইসরায়েল আর ইউরোপ এক পথে সংযুক্ত হবে। বিদ্যুৎ ও ডিজিটাল সংযোগের পাশাপাশি এই পথে হাইড্রোজেন রপ্তানির জন্যও পাইপ বসানো হবে।
সম্মেলনে বাইডেন যখন এই সমঝোতাকে একটি ‘বিশাল চুক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেন তখন তার এক পাশে বসা ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আরেকপাশে মোহাম্মদ বিন জায়েদ, যাকে সবাই এমবিজেড নামে চেনেন।
বাইডেন বলেন, ‘বিশ্ব এখন একটি ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।’ তিনি এ-কথাও যোগ করেন যে আজকের দুনিয়ায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা আগের চেয়ে অনেক জটিল।
ইসরায়েল এ প্রকল্পটিকে দেখছে সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ হিসেবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সহযোগিতার প্রকল্প আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘এটা আমাদের বৈশ্বিক এবং ঐতিহাসিক অনেক পরিস্থিতির পরিবর্তন করবে।’
বাইডেন- মোদী- নেতানিয়াহু-এমবিজেড যখন এত খুশি শি চিন পিং-এর কী অবস্থা?
সম্মেলনে তিনি যোগ দেননি। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জি-২০ সম্মেলনে তিনি কখনওই অনুপস্থিত থাকেননি। উপসাগরীয় আরব অঞ্চলের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো এটাই এতদিন শি চিন পিং মনে করতেন। এবার কী অবস্থা দাঁড়াল?
কিছু গবেষক বলছেন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন বাণিজ্য পথের উদ্যোগ স্পষ্টতই চীনের জন্য হুমকি। কারণ, চীন ইতোমধ্যে এ-পথে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে। যা ইংরেজিতে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশেয়েটিভ (বিআরআই)’ নামে পরিচিত। ‘রেশম পথ অর্থনৈতিক বলয়’ নামেও একে অনেকে অভিহিত করেন। ২০১৩ সালে এই বিশাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এতে এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়ে গেছে। গত মাসেই বেইজিং ঘোষণা করেছিল বিআরআই ১৫০ টিরও অধিক দেশ এবং ৩০টির অধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সহযোগিতার নথিপত্রে স্বাক্ষর করেছে।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে প্রকল্পটি কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, কিছু কাজ স্থগিত হয়ে গেছে। চীন ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। তবে, তারা এও বলছে, এসব পুরো খণ্ডচিত্র, প্রকল্পের পুরো ছবি নয়। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই চীনের দাবি।
অন্য দিকে জো বাইডেন একে বলেছেন, ‘ঋণের জালে আবদ্ধ হওয়ার চুক্তি, ফাঁসির দড়িতে লটকে পড়ার চুক্তি।’ গত মাসেই তিনি বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জি-সেভেন-এর লক্ষ্যই থাকবে বিআরআইয়ের বিকল্প কিছু দাঁড় করানো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানিকেও নতুন এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়ানোর ইচ্ছা বাইডেনের। তবে জি-২০ সম্মেলনে বাইডেন আবার এ কথাও বলেছেন যে, তিনি মার্কিন-চীন সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক।
চীন এ-ব্যাপারে এখনো কিছু বলেনি। তবে, স্বাভাবিকভাবেই ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলো দাবি করছে, জি-২০ সম্মেলনে তারা খুব লাভবান হয়েছে। তার মানে কি মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এতদিন ধরে চীনের গড়ে তোলা আশায় গুড়ে-বালি পড়লো?
সিএনএন অবলম্বনে
Discussion about this post